সিলেটে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচসহ বাজরে সব সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায় কেজি। দামে রেকর্ড গড়ে ফেলেছে ধনেপাতাও। প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮০০ টাকায়, যা গত দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি হিসেবে। শুধু কাঁচামরিচ আর ধনেপাতাই নয়, অধিকাংশ সবজির কেজি ১০০ টাকার নিচে মিলছে না।
বাজারে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমূখী অবস্থা বিপাকে ফেলছে ক্রেতাদের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা সরবরাহ কমে গেছে। সবজিও মিলছে না চাহিদামতো। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
ভোক্তারা বলছেন, কাঁচা মরিচ বা ধনেপাতা এমন কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য না। তারপরেও লাফিয়ে লাফিয়ে এই দু’টি পণ্যের দাম বেড়েছে। গত বছরও একবার কাঁচা মরিচের দাম দুইশত টাকা ছাড়িয়ে যায়। এবার খরা ও তীব্র তাপে দেশে কাঁচা মরিচের ফলন নষ্ট গেছে এমন অজুহাত দাঁড় করায় ব্যবসায়ীরা। যেহেতু দেশে ফলনের ক্ষতি হয়েছে, তাই সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তারপরেও কাঁচা মরিচের লাগামহীন দাম মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনকে বলবো, বাজারে যাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার ও আম্বরখানা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৪৫০–৫০০ টাকা ও ধনেপাতা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে
বিক্রেতা মোস্তফা কামাল বলেন, সোবহানীঘাটের সবজি আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন, বাজারে ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচের সংকট রয়েছে। আমাদের প্রতি কেজি ধনেপাতা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ কিনতে হয়েছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম আবারো বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশে।
এছাড়া প্রায় বিভিন্ন জাতের মাছের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশে বেড়েছে দুেই থেকে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বরবটি ১৪০, ঢেরশ ১১০-১২০, করলা ৯০, চিচিঙ্গা ৯০, পটল ৯০-১০০ ধুন্দল ৮০, বেগুন ৭০-১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ২৫০ টাকার নিচে টমেটো মিলছে না।
অন্যদিকে রুই থেকে ইলিশ সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ১৭০০ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৯০০-২০০০ টাকায়। ৩৫০ টাকার রুই ৪৫০ টাকায়।
কেজিতে ১০-২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ১৮০-১৯০ টাকার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়। সরবরাহ কম থাকার কারণে মাছের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের ব্যবসায়ী আফরোজ আলী।
রিকাবীবাজারে কথা হয় অটো চালক আকবর হোসেনের সাথে। তিনি হতাশার সুরে বলেন, আগের আয়ের চেয়ে এখনকার আয় অনেক কম। বাজারে এসে চোখে অন্ধকার দেখছি। জীবনটাকে কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। পরিবারে সব খাতে ব্যয় কমিয়েছি, তারপরেও টানাটানি। সবজি কিনব সেই অবস্থাও নেই। দাম শুনে মাথা ঘুরে যায়। এখন বাজারে আসার কথা শুনলেই মনটা বিষিয়ে ওঠে।
গৃহিনী মিনতি সিনহা বলেন, দুই দিন আগেও সবজির যে দাম ছিল এখন তারচয়ে দাম বেশি। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। করলা-পটল,কলমি শাক,পুঁইশাক, পেঁপে,বরবটি, কচুমুখী, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়াসহ সব সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গত পরশু ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা বিক্রি হলেও সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
তাদের মতো বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত আটজনের সঙ্গে কথা হয় এদিন।
তারা জানালেন, বাজারে মাঝারি মানের চালের কেজি ৭০ টাকা। ফার্মের ডিমের হালি ৬০, বড় সাইজের চাষের পাঙাশ ২৪০-২৮০, রুই ৪৫০, চাষ ও নদীর চিংড়ি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। সব সবজির দামও আকাশছোঁয়া। কিন্তু আয় এক পয়সাও বাড়েনি। ধার দেনা কিংবা সঞ্চয় ভেঙে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো টানাপোড়েন কমাতে পারছে না।