Home » সিলেটে আন্দোলনে নিহত ২২ জনের দাফন ময়নাতদন্ত ছাড়াই, লাশ তোলা হবে ৯ জনের

সিলেটে আন্দোলনে নিহত ২২ জনের দাফন ময়নাতদন্ত ছাড়াই, লাশ তোলা হবে ৯ জনের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিলেটে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবসহ ৪ জনের লাশের ময়নাতদন্ত হলেও বাকি ২২ জনকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি দাফন করার জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এ বছরের ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেটে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ২৬ জন। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত ৬ জনের লাশ উত্তোলনের জন্য প্রায় এক মাস আগে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসকল হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের কথা বললেও কেবল ময়নাতদন্ত না হওয়ায় খুনিদের বিচার হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশে ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৯ জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৬টি ও বিয়ানীবাজারের ৩টি লাশ রয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ হলেই খুব শিগগিরই ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো তোলা হবে।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিহত ৬ জনের ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে নিহতের পরিবার থানায় হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করার পর তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে নিহতের ময়নাতদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে মরদেহ তোলার আদেশ দেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর পরই গোলাপগঞ্জে নিহত ৬ জনের লাশ উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসনের চার জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের মধ্যে আলোচনা করে সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে লাশ উত্তোলন করবেন।

এদিকে, আন্দোলনের সময় সিলেটের গোলাপগঞ্জে ছয় জনের মধ্যে নিহত গৌছ উদ্দিনের লাশ উত্তোলন না করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন দিয়েছেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মো. রেজাউল করিম। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানার আদালতে তিনি আবেদন করেন। তবে আবেদনের শুনানিতে বিচারক আবেদনটির নথি সংরক্ষণ করার কথা জানিয়েছেন। কোনও আদেশ দেননি। যার ফলে আগের লাশ উত্তোলনের আদেশ বহাল রয়েছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২-এর বিচারক আবিদা সুলতানা মলি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬ জনের লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। গত ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে পুলিশ ও বিজিবির ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৪), দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ জয় (২০), শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (২২), বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০) দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩), ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন (৩৫)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় পৃথকভাবে ৬টি মামলা এবং আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। সবকটি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলীয় অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর গোলাপগঞ্জের চারটি মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে নিহত গৌছ উদ্দিনের মরদেহ কবর থেকে তোলার দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জনি রায়, নাজমুল ইসলামের মরদেহ উত্তোলনের দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জর্জ মিত্র চাকমা, হাসান আহমদ জয়ের মরদেহ তোলার দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও সানি আহমদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আব্দুন নাসের জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে ৬ জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করলে আদালত সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে নিহতদের মরদেহ কবর থেকে তোলে ময়নাতদন্তের জন্য আদেশ দিয়েছেন। আদেশের পর পরই জেলা প্রশাসন থেকে চারজন ম্যাজিস্ট্রেকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই লাশগুলো যত দ্রুত সম্ভব কবর থেকে তোলা হবে। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

তিনি জানান, আমরা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছি। স্বজন হারিয়ে তারা অনেকটা বাকরুদ্ধ। তারা আমাদেরকে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই সময়কার দুঃখ-কষ্টের কথা শেয়ার করেছেন। আইনি বিষয়ে যা বুঝানোর তাদেরকে বুঝিয়েছি। জেলা প্রশাসন থেকে যদিও চারজন ম্যাজিস্ট্রেটকে এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে আমরা চেষ্টা করবো ৬ জনেরই মরদেহ কবর থেকে তোলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার।

ওসি আর জানান, নিহত গৌছ উদ্দিনের মরদেহ কবর থেকে না উত্তোলন করার জন্য মামলার বাদী আদালতে আবেদন দিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যার জন্য আগের নির্দেশনা বহাল রয়েছে বলে তিনি জানান।

এছাড়া গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিয়ানীবাজারের বিজয় চত্বরে বিজয় উল্লাসের সময় উৎসুক জনতা থানায় হামলা ও লুটপাট চালালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গুলি ছোঁড়ে। এসময় ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৩ জন। এ ঘটনায় নিহত বিয়ানীবাজারের তারেক আহমদ, রায়হান আহমদ ও ময়নুল ইসলামকে গত ৬ আগস্ট ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের মরদেহ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। এসব ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে বিয়ানীবাজার থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন নিহতের পরিবার। মামলার অগ্রগতির জন্য তাদের মরদেহ খুব শিগগিরই ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *