ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। অবশ্য এখনও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল ও ঘোলাটে পরিবেশ তৈরির পাঁয়তারা চলছেই। এরই মধ্যে আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর সারা দেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। ধর্মীয় এই উৎসবকে কেন্দ্রে করেও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তারা। আর সেই শঙ্কা থেকেই সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে এখনও নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এমনকি টার্গেট করা হয়েছে ধর্মীয় স্থাপনা ও উৎসবকে। আর এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন ইউনিটকে।
আসন্ন দুর্গাপূজায় বড় বড় পূজামণ্ডপগুলোতে র্যাব ও পুলিশের বিশেষ টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজায় গুজব ছড়ানো, বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও দুষ্কৃতিকারীদের অশুভ তৎপরতা রোধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে দ্রুত সারা দিতে মাঠে নিয়োজিত থাকবে র্যাবের বিশেষ র্যাপিড রেসপন্স টিম।
এদিকে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি পূজা চলাকালে মণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। দুর্গাপূজা চলাকালে পূজামণ্ডপ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে। পূজা উদযাপনকালে প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রাখা হবে। পূজামণ্ডপগুলোতে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউএনও অফিস ও থানা থেকে মনিটরিং করা হবে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ বিশেষ টিম প্রস্তুত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবারের মতো এ বছরও বিশেষ নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিয়েছে র্যাব। র্যাব সদস্যরা অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। এবার বিশেষ করে পূজামণ্ডপগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় আমরা র্যাপিট রেসপন্স টিম গঠন করেছি।
এ বিষয়ে পূজামণ্ডপগুলোর কমিটির সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা যেন কোনোকিছু সন্দেহ হওয়া মাত্রাই আমাদের দ্রুত জানান, এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এমন তথ্য পেলে দ্রুত সাড়া দিতে আমাদের বিশেষ টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া যারা অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়াবে, উসকানিমূলক কথা বলে পোস্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক নজরে রাখবে। যে কোনোধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে রাজধানীর প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে র্যাবের চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা মহানগর এলাকার প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে। পূজার আগে, পূজা চলাকালে এবং প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সময় ভাগ করে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে পুলিশের পূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দুর্গাপূজা চলাকালে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে নির্বিঘ্নে উদযাপিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ইস্যুতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। সাবোটাজ হতে পারে।
তিনি বলেন, বিজিবির আওতাধীন এলাকায় অন্য বছরের তুলনায় এবার এক অর্থে কমেছে। অন্য বছর সুনির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও পূজামণ্ডপ করা হতো। এবার সেটা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। কারও অধিকার খর্ব করার জন্য নয়। যাতে করে যেখানে পূজা হচ্ছে, সেখানে যেন ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়। সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু বড় মন্দির ওপারে-এপারেও আছে। সেখানে যাতে ‘ক্রস বর্ডার’ না হয়, সেটার বিষয়েও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।