দেশে উৎপাদনে থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুদ শেষ হতে পারে ২০৩১ সাল নাগাদ। এমন অবস্থায় নতুন কূপ খননে জোর না দিলে এলএনজি আমদানি নির্ভরতা বাড়বে। এতে, জ্বালানি নিরাপত্তা আরো ঝুঁকিতে পড়বে, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যদিও পেট্রোবাংলার দাবি, ৫০ কূপ খননের মাধ্যমে ২ বছরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস।
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা যখন ৪০০ কোটি ঘনফুট, তখন মিলছে ২৫০ কোটির মতো। জ্বালানি খাতের বেহাল দশায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। এজন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন, বিদায়ী সরকারের অদূরদর্শিতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘এই যে গ্যাসের সংকট, তাহলে ওনাদের পরিকল্পনাটা কোথায় ছিল? ওনারা কি ধরনের প্ল্যানিং করেছেন? ওনারা তো আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর, এখানে মশকরা করলে তো হবে না। আপনাকে আমাদের সময় মতো গ্যাস দিতে হবে। আমরা কি গ্যাসের জন্য সময় মতো পে করি না?’
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, গত দেড় দশক বছরে গড়ে ২টি অনুসন্ধান কূপও খনন হয়নি। ফলে, ২০১৭ সালে গ্যাসের মাস্টারপ্ল্যানে এলএনজি আমদানি প্রাধান্য পায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিনের উদাসীনতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘গ্যাস সেক্টরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে গতি। ধীর গতির কারণে যেটা পরিকল্পনা করা হয় সেটা বাস্তবায়নে, যেটা ২ বছর সময় দেওয়া হয় সেটায় লাগে ৪–৫ বছর। সুতরাং এর থেকে বের হয়ে আসতে যদি না পারি, তাহলে আমাদের এই সমস্যা সমাধান হবে না।’
দেশের ২৯ গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে উৎপাদনে আছে ২০টি। যেগুলোর মজুদ ৭ দশমিক ৩২ টিসিএফ। বাড়তি গ্যাস পেতে ২০২৩ সালে পেট্রোবাংলা অনুসন্ধান, উন্নয়নসহ মোট ৫০ কূপ খননের উদ্যোগ নেয়। যার মধ্যে ১৫টির খনন শেষ হয়েছে। বাকি ৩৫ কূপের ১৮টি খনন করবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। বাকিগুলোতে বিদেশি ঠিকাদার নিয়োগ হবে উন্মুক্ত দরপত্রে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘আমরা ১৪টি কূপ খনন করে যে সফলতার হার পেয়েছি, আমরা আশা করছি এই হার যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা ৬০০’র কাছাকাছি চলে যাব। কোনো কোনো কূপে যদি অভূতপূর্ব বেশি পরিমাণে পাই তাহলে এটা ক্রস করতে পারে।’
জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনায় দেখা যায়, ২০৩০-৩১ অর্থবছর নাগাদ গ্যাসক্ষেত্রের বিদ্যমান কূপগুলোর উত্তোলন নামতে পারে মাত্র ৭০ কোটি ঘনফুটে। তখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা থাকবে প্রায় ৫০০ কোটি ঘনফুট।