Home » মেক্সিকোর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ক্লডিয়া শেইনবম

মেক্সিকোর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ক্লডিয়া শেইনবম

স্বাধীনতার ২শ’ বছরে প্রথমবার নারী প্রেসিডেন্ট পেতে চলেছে মেক্সিকো। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) শপথ গ্রহণের মাধ্যমে এই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ক্লডিয়া শেইনবম। তার পূর্বসূরির মতো বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দরিদ্রদের হয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার করলেও, নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে রয়েছে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।

জুনে ৬০ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন শেইনবম। বিজ্ঞানী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ৬২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট একগাদা আশু সমস্যা মোকাবিলা করবেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখ রাঙানি দিচ্ছে দেশজুড়ে বিরাজমান উচ্চমাত্রার নৃশংসতা, মন্থরগতির অর্থনীতি ও ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত আকাপুল্কো।

মেক্সিকোর সেন্টার ফর ইকোনমিক রিসার্চ অ্যান্ড টিচিং এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক কার্লোস পেরেজ রিকার্ট বলেছেন, ‘বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওবরাডোর ছিলেন প্রচণ্ড ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব। এর জোরেই বেশ কিছু রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ চাপা পড়ে যেতো। তবে ক্লডিয়া শেইনবমের সেই সুযোগ নেই। তাই, যেখানে ওবরাদোর যেসব চ্যালেঞ্জ ক্যারিশমা দিয়ে উতরে গেছেন, শেইনবমকে সে বাঁধা টপকাতে হতে হবে কার্যোদ্ধারে সক্ষম।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের আকাপুল্কো এলাকায় তিনি প্রথম সফর করবেন।

এছাড়া ড্রাগ কার্টেরলদের আধিপত্য থাকা উত্তরাঞ্চলীয় কালিকান শহরের আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতিও সামলাতে হবে শেইনবমকে। দেশের উত্তরে তিজুয়ানা থেকে দক্ষিণে চিয়াপাস পর্যন্ত ড্রাগ মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে হাজারো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাজেট ঘাটতিতে থাকা শ্লথগতির অর্থনীতি নিয়েও বিপাকে পড়তে পারেন নতুন রাষ্ট্রপ্রধান।

তবে সব চ্যালেঞ্জকে ছাপিয়ে সামনে চলে আসছে আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও মেক্সিকোর সীমান্তে ‘বিশাল দেয়াল’ গড়তে চাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারও প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা।
ইতোমধ্যেই মেক্সিকোতে নির্মিত গাড়ির ওপর ১শ’ শতাংশ শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। যদিও তার বাগাড়ম্বরপূর্ণ এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন, শেইনবমের প্রেসিডেন্সি দুর্বিষহ করে তুলতে ট্রাম্পের কাছে কৌশলের অভাব হবে না। যেমন তার প্রচারণায় প্রায়শই নির্বাচনে জিতলে ব্যাপক হারে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন ট্রাম্প।

এদিকে, মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন মেক্সিকোর ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘ড. শেইনবমের প্রেসিডেন্সিতে আমরা আরও অগ্রসর, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।’

মেক্সিকোকে নতুন কোনও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য শেইনবম অত্যন্ত যোগ্য একজন মানুষ। যেমন, জ্বালানি প্রকৌশলে তার পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও তিনি অত্যন্ত সরব।

রয়্যাল হলোওয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের জেন্ডার অ্যান্ড পলিটিক্সের অধ্যাপক, জেনিফার পিসকোপো, ল্যাটিন আমেরিকা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। শেইনবমের ঐতিহাসিক জয় নিয়ে পিসকোপো বলেছেন, প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নতুন এক বার্তা দিলো মেক্সিকোর মানুষ। তারা এটা দেখালো, মেয়েরাও যোগ্যতায় পিছিয়ে নেই। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আবার অবাস্তব আকাঙ্ক্ষার চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

তিনি বলেছেন, ‘নারী নেতৃত্ব একটি শক্তিশালী প্রতীক। কিন্তু তাদের তো কোনও জাদুকরী ক্ষমতা নেই। সরকারের সামনে যদি থাকে দৈত্যাকার চ্যালেঞ্জ, তবে রূপকথার মতো রাতারাতি সমাধানের আকাঙ্ক্ষা বরং গভীর হতাশাই (নারী নেতৃত্বে) সৃষ্টি করতে পারে।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *