Home » হার্ট সুস্থ আছে তো

হার্ট সুস্থ আছে তো

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে— দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর, যা ২০২২ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৪ বছর। ফলে এক বছরের ব্যবধানে দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে। বিবিএস-এর জরিপে আরও জানা গেছে, মৃত্যুর জন্য দায়ী শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে প্রথমে রয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে বা স্ট্রোকে মৃত্যু। ২০২৩ সালে মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮ শতাংশ।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ (২৯ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘হার্ট ফর অ্যাকশন’। যা মানুষকে তাদের হৃদয় সুস্থ রাখতে এবং সাধারণ সুস্থতার প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ সংঘটিত হয় অসংক্রামক রোগের কারণে। হৃদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, শ্বাস রোগের মতো অসংক্রামক রোগে প্রতিবছর দেড় কোটি মানুষ মারা যায়; যাদের বয়স ৩০ থেকে ৬৯ এর মধ্যে। এই মৃত্যুর ৮৫ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে। বাংলাদেশও এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন- তাদের মধ্যে ১৭ শতাংশেরই হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ জন তরুণের একজন হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টোরেলের মাত্রা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী।

চিকিৎসকদের মতে, দিনে খাবারের সঙ্গে এক চামচ পরিমাণ লবণ গ্রহণ করা যায়। তবে এর বেশি হলে ডেকে আনবে মারাত্মক বিপদ। বাসার তৈরি খাবারের পাশাপাশি প্যাকেটজাত খাবারেও ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষকরা এসব খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়েও বেশি লবণ পেয়েছেন। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস এবং জীবনযাপন।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর মতে, হার্ট অ্যাটাকে মানুষের মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হয়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা ঐতিহ্যগতভাবে শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাই এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাই। যেকোনও মানুষের খাবারে এক ভাগ শর্করা থাকে, যা ৫০ শতাংশের বেশি না, ২৫-৩০ শতাংশ আমিষ থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ৮০-৯০ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন। এর কারণে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভারের মতো রোগ দেখা দেয়।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, হৃদরোগ বাড়ার পেছনে তামাকের ব্যবহার, স্থূলতা, ট্রান্স ফ্যাট, লবণ বেশি খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা এবং বায়ুদূষণ দায়ী। এসব কারণে দেশে হৃদরোগ এবং হৃদরোগে মৃত্যু বাড়ছে। বিশ্বের অনেক দেশে হৃদরোগে মৃত্যুহার বেশি, সেসব দেশে ৭০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ বেশি মারা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ৭০ বছর বয়সের নিচে মৃত্যু বেশি।

তিনি আরও বলেন, কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের ভেতরের ধমনীর যে ছিদ্রপথ সেটি সরু করে ফেলে। যার কারণে হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়। এছাড়া অলস জীবনযাপন করলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলেও হয়ে থাকে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *