লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অব্যাহত হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অবিচাই আদ্রে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে নির্মূল করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেনি হিজবুল্লাহ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ শহরতলির দাহিয়েহ এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় তারা। ওই এলাকার একটি আবাসিক ভবনের নিচে গোষ্ঠীটির ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সদরে চালানো ‘লক্ষ্যনির্ভর হামলায়’ নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন।
সামরিক বাহিনীর আলাদা একটি পোস্টে বলা হয়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী-আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের হামলায় শুধু হিজবুল্লাহ প্রধানই নন বরং ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডারসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাও নিহত হয়েছে।
আরবিতে পোস্ট করা আদ্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে আঘাত হানে ইসরায়েল। অবিচাই আদ্রে তার বিবৃতিতে আরও জানান, আরও একজন শীর্ষ হিজবুল্লাহ নেতা আলী কারাকিকেও হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলের এসব বিবৃতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হিজবুল্লাহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এখনও পর্যন্ত নাসরাল্লাহর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনও বিবৃতি দেয়নি। ৩২ বছর ধরে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন নাসরাল্লাহ। এই সময়ে হিজবুল্লাহ একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ফলে তার মৃত্যু শুধু হিজবুল্লাহর জন্য নয়, ইরানের জন্যও একটি বিশাল আঘাত হিসেবে দেখা হবে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড ১৯৮২ সালে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তেহরানের প্রভাব ছড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে আক্রমণের পর শনিবার নতুন করে আরও বিমান হামলা চালানো হয়। এই হামলা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও তীব্র করেছে এবং এই অঞ্চলে ব্যাপক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
শুক্রবারের হামলার প্রথম দিকে হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল, নাসরাল্লাহ জীবিত আছেন।
ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, তিনি নিরাপদে আছেন।
পরে হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল, নাসরাল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুল্লাহ প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।