সিলেটসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড (নারী) কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সিটি কাউন্সিলরদের অপসরাণ করা হয়।
গত বছরের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আগের দুই বারের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী দলের নির্দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ফলে প্রায় খালি মাঠে লড়াই করে সিসিকের মেয়র পদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পান ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ৬৫ হাজার ৫১৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ওই বছরের নভেম্বরে তিনি সিসিক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
হাসিনা সরকর পতনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটসহ দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের বদলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সিসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার অপসরাণ করা হলো সিটি করপোরেশনের সব কাউন্সিরকে।
গত নির্বাচনে সিসিকের ৪২ ওয়ার্ডে নির্বাচিত হওয়া সাধারণ কাউন্সিলররা ছিলেন- ১নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ২নম্বর ওয়ার্ডে বিক্রম কর সম্রাট, ৩নম্বর ওয়ার্ডে আবুল কালাম আজাদ লায়েক, ৪নম্বর ওয়ার্ডে শেখ তোফায়েল আহমদ শেপুল, ৫নম্বর ওয়ার্ডে রেজওয়ান আহমদ, ৬নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ হোসেন শামীম, ৭নম্বর ওয়ার্ডে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ, ৮নম্বর ওয়ার্ডে জগদীশ চন্দ্র দাশ, ৯নম্বর ওয়ার্ডে মখলিছুর রহমান কামরান, ১০নম্বর ওয়ার্ডে তারেক উদ্দিন, ১১নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুর রকিব বাবলু, ১২নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সিকন্দর আলী, ১৩নম্বর ওয়ার্ডে শান্তনু দত্ত সন্তু, ১৪নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুমিন, ১৫নম্বর ওয়ার্ডে ছয়ফুল আমিন বাকের, ১৬নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল মুহিত জাবেদ, ১৭নম্বর ওয়ার্ডে রাশেদ আহমদ, ১৮নম্বর ওয়ার্ডে এবি এম জিল্লুর রহমান, ১৯নম্বর ওয়ার্ডে এস এম শওকত আমীন তৌহিদ, ২০নম্বর ওয়ার্ডে আজাদুর রহমান, ২১নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আব্দুল রকিব তুহিন, ২২নং ওয়ার্ডে ফজলে রাব্বী চৌধুরী, ২৩নম্বর ওয়ার্ডে মোস্তাক আহমদ, ২৪নম্বর ওয়ার্ডে হুমায়ুন কবির সুহিন, ২৫নম্বর ওয়ার্ডে তাকবির ইসলাম পিন্টু, ২৬নম্বর ওয়ার্ডে তৌফিক বক্স লিপন, ২৭নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল জলিল নজরুল, ২৮নম্বর ওয়ার্ডে রায়হান হোসেন, ২৯নম্বর ওয়ার্ডে মাজহারুল ইসলাম শাকিল, ৩০নম্বর ওয়ার্ডে রকিব খান, ৩১নম্বর ওয়ার্ডে নজমুল হোসেন, ৩২নম্বর ওয়ার্ডে রুহেল আহমদ, ৩৩নম্বর ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন, ৩৪নম্বর ওয়ার্ডে জয়নাল আবেদীন, ৩৫নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম, ৩৬নম্বর ওয়ার্ডে হিরন মাহমুদ নিপু, ৩৭নম্বর ওয়ার্ডে রিয়াজ মিয়া, ৩৮নম্বর ওয়ার্ডে মো. হেলাল উদ্দিন, ৩৯নম্বর ওয়ার্ডে আলতাফ হোসেন সুমন, ৪০নম্বর ওয়ার্ডে লিটন আহমদ, ৪১নম্বর ওয়ার্ডে ফখরুল আলম এবং ৪২নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান।
আর সংরক্ষিত ১৪ ওয়ার্ডে বিজয়ী নারী কাউন্সিলররা ছিলেন- ১নং ওয়ার্ডে সালমা সুলতানা, ২নং ওয়ার্ডে কুলসুমা বেগম পপি, ৩নং ওয়ার্ডে রেবেকা বেগম রেনু, ৪নং ওয়ার্ডে মোছা. রুহেনা খানম মুক্তা, ৫নং ওয়ার্ডে শাহানা বেগম শানু, ৬নং ওয়ার্ডে শাহানারা বেগম, ৭নং ওয়ার্ডে নার্গিস সুলতানা, ৮নং ওয়ার্ডে শারমিন আকতার রুমি, ৯নং ওয়ার্ডে ছমিরন নেছা, ১০নং ওয়ার্ডে আয়শা খাতুন কলি, ১১নং ওয়ার্ডে সালমা আক্তার, ১২নং ওয়ার্ডে মোছা. হজেরা বেগম, ১৩নং ওয়ার্ডে ফাতেমা বেগম, ১৪নং ওয়ার্ডে বাবলি আকতার।
এদিকে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরই সিলেটের প্রায় সব আওয়ামী লীগ নেতা এবং জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানও লাপাত্তা হয়ে যান। সম্প্রতি খবর পাওয়া যায়- দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছেন তিনি। তবে তিনি কবে ও কীভাবে লন্ডনে গেছেন তা জানা যায়নি।
একটি সূত্র বলছে- সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখান থেকে যান লন্ডনে।
অপরদিকে, সিসিকের আওয়ামীপন্থী বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরও ৫ আগস্টের পর লাপাত্তা হয়ে যান। তারা হলেন- ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাট, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ. কে. এ লায়েক, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাশ, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরান, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আজাদুর রহমান আজাদ, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু, ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রুহেল আহমদ, ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জেলে রয়েছেন ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু।