বাজারে ইলিশের দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। ভরা মৌসেুমেও কেন ইলিশ মাছের এতো দাম হাঁকা হচ্ছে–– তা জানতে বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযানে দেখা গেছে, আড়তদারের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকায় কেনা ইলিশ ব্রিকেতারা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন ২ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ একটি ইলিশ মাছে ৭০০ টাকার মতো লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে দেশের বিভিন্ন ইলিশের বাজার ও আড়তগুলোতে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রাজধানী কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী পাইকারি মাছের আড়তে অভিযান চালায় প্রতিষ্ঠানটির দুটি বিশেষ টিম। কাওরান বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল ও প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান। যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম ও প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম।
বাজার অভিযানে এসে ইলিশের বাড়তি দামের প্রমাণ মেলে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল। কাওরান বাজারে পরিচালিত অভিযানে দেখা যায়, ইলিশ বিক্রির আড়তে ইলিশ মাছ ক্রয় সংক্রান্ত কোনও প্রকার তথ্য বা ক্যাশ মেমো সংরক্ষিত নেই; ইলিশ মাছ বিক্রির ক্যাশ মেমো দেওয়া হচ্ছে না; পাইকারিতে ১ হাজার ৪৫০ টাকা কেজি দরে ইলিশ মাছ কিনে খুচরা ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। এ রকম অপরাধে পাঁচ আড়তদারকে ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভবিষ্যতে ইলিশ মাছ কেনা ও বিক্রি উভয় ক্ষেত্রে পাকা ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করা ও দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অভিযানে দেখা যায়, মনপুরা, ভোলা, মহীপাল, ফেনী, চাঁদপুর ও পাথরঘাটা থেকে ইলিশ মাছ যাত্রাবাড়ী বাজারে আসে। এক কেজি ৫০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা প্রতিকেজি, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কেজি, ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ১৪৫০-৭০ টাকা প্রতি কেজি, ৫০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ৯০০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে পাইকারি পর্যায়ে। কমিশন এজেন্ট ৩ শতাংশ হারে রাখা হচ্ছে। কোনও ব্যবসায়ী পাকা রশিদ সংরক্ষণ ও সরবরাহ করছেন না। মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হচ্ছে না। বাজারে ২০০-এরও ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী আছেন। অনিয়মের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, আড়তদাররা যে দামে ইলিশ বিক্রি করছেন, সেটি যৌক্তিক কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। বিক্রির পাকা রশিদও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
যৌক্তিক লাভ করেই ব্যবসায়ীদের ইলিশ বিক্রি করতে হবে জানিয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, সরকার ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ খবর জানা মাত্রই মাছ ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে কেজিপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসব নির্মূল করতে হবে।
তিনি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৫৫০ টাকায় কিনে ২২০০ টাকায় ইলিশ বিক্রি করছেন। প্রায় ৬৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন। মুনাফার অতি লোভের করুণ চিত্র এখন মাছ বাজারে। সারা দেশে একই অবস্থা। এতে ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ।