ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। দেশে ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দেশ ত্যাগের ৪৫ দিন পার হয়েছে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর)। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সারা দেশের মতো সিলেটেও হঠাৎ উধাও হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে দেশ ছেড়েছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ও দাপুটে নেতাদের বড় একটি অংশ। তাদের অধিকাংশই অবস্থান নিয়েছেন ভারতে। কেউ কেউ আছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তবে, দলটির অধিকাংশ অর্থাৎ ৯০ ভাগেরও বেশি নেতাকর্মী নিরাপদ অবস্থানে আছেন সিলেট অঞ্চলেই। তারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, মামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড, গতিবিধির দিকেই সার্বক্ষনিক নজর ও খোঁজ খবর রাখছেন।
এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিলেটে সিলেটে অর্ধ শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি হত্যা মামলা। অন্যগুলো ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে হামলা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনসহ বিভিন্ন আইনে দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১৫ হাজেরের বেশি। আসামিরদের অধিবাংশই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী। আসামিদের মধ্যে সাবেকমন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন-পৌরসভার সাবেক মেয়র-কাউন্সিলর, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও। আসিামির তালিকায় আছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যও। অধিকাংশ ‘রাজনৈতিক মামলায়’ ১০জন সাংবাদিকসহ অরাজনৈতিক লোকদেরও আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় আছেন প্রবাসীরাও। যারা ঘটনার সময় দেশেই ছিলেন না। এছাড়া হত্যাসহ কয়েকটি মামলার বাদিরা-ই চিনেন না নিজ নিজ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের। এ ব্যাপারে কয়েকজন বাদি আদালতেরও শরণাপন্ন হয়েছেন, ‘ভুলে অন্তর্ভূক্ত’ হওয়া আসামিদের নাম বাদ দিতে চেয়েছেন। নিজে মামলাই করেননি-এমন দাবিও করেছেন বাদিদের কেউ কেউ। এমতাবস্থায় মামলার বেড়াজালে পড়ে আতঙ্কে আছেন ‘নিরপরাধ’ অংখ্য মানুষ। যারা মামলার এজাহার থেকে নাম কর্তন করতে প্রতিনিয়ত মামলার বাদিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের ধর্ণা দিচ্ছেন। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ‘ধান্ধাবাজ’ কিছু রাজনৈতিক নেতা ও ‘মামলাবাজ’। এমন খবরও আসছে গণমাধ্যমে।
সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস পরও আওয়ামী লীগের অনেক দাপুটে নেতা, সাবেক জনপ্রতিনিধি অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে ভারত হয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী,সিলেট-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোবাশ্বির আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রাহমান চৌধুরী জাবেদ, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হান্নান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাহির, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, যুক্তরাজ্য যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন ওরফে শিবলু, বাঘা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ, যুবলীগ নেতা সামস উদ্দীন। কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষার। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর শাফি এলিম চৌধুরী। দুবাইয়ে অবস্থান করছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সম্পাদক এমদাদ রহমান।
এখনো ভারতে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল লতিফ রিপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসার আজিজ, জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ও কোষাধ্যক্ষ জালাল আহমদ।
এছাড়া দেশ ছাড়ার চেষ্টায় আছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, ফেঞ্চুগঞ্চ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসফাকুল ইসলাম সাব্বিরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক প্রভাবশালী দাপুটে নেতা। তারা কিভাবে দেশ ত্যাগ করতে পারেন-সেই সুযোগ খুঁজছেন বলে জানা গেছে।