তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ঢেলে সাজানো হবে। একটা সংস্কার কমিশন করে তারপরে সেটা কমিশনে রূপান্তর করা হবে। আজ শুক্রবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, নীতিমালাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যেন গণমাধ্যমগুলো স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে চলতে পারে এবং অবশ্যই স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিভিন্ন প্রকল্পের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সকল প্রকল্পের একটা রিভিউ কমিটি করা হয়েছে, যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ আছে সেগুলো তদন্ত করা হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব কমিটি ছিল, সেগুলোকে বাতিল করে পুনর্গঠনের কাজ চলছে।
শহিদদের স্মরণে সভা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘নিহত ও আহতদের তালিকাটি চূড়ান্ত হলে শহিদদের স্মরণসভাটি আয়োজিত হবে। এখন পর্যন্ত ৭২৮ জন শহিদের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাওয়া গেছে এবং তাদের ঠিকানা খুঁজে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যা ২০ হাজার ২৬৩ জন। এগুলো ভেরিফাই করা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে আগামী রোববারের মধ্যেই একটা চূড়ান্ত তালিকা পাওয়া যায়।’
স্মরণসভার বাজেট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পাঁচ কোটি টাকা। নিহতদের পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসা সহ থাকার ব্যবস্থার সিংহভাগ খরচ এই টাকা থেকে ব্যয় হবে।
বিভিন্ন নীতিমালার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনাব নাহিদ ইসলাম বলেন, যে ধারাগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেই ধারাগুলো সংশোধন করে হবে; নাকি পুরো আইনটাই বাতিল করা হবে, তা যাচাই-বাছাই পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো আইন যেন গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটা খেয়াল রাখা হবে।
প্রশাসনের বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রশাসনে স্থবিরতা আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছি এবং যেহেতু অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করছি, সমস্যা আসছে, আন্দোলন আসছে, দাবি দাওয়া আসছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের স্থবিরতা কেটে যাবে।’
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, গুমের জন্য তদন্ত কমিশন করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে সাংবাদিকদের যে হয়রানিগুলো হয়েছে, সেটা বিবেচনা করা হবে। একইসাথে ১৬ বছর ধরে যে মামলাগুলো ছিলো, সেগুলো তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। সাংবাদিকদের হয়রানি ও মামলার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ আরো বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের নামে মামলা করা হচ্ছে। নিরপরাধ কোনো সাংবাদিক যেন ভুক্তভোগী না হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে। সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত করে মামলা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলার ঘটনা ঘটেছে, যা সমর্থনযোগ্য নয়।
উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের এমনকি সরকারের দায়িত্বে থাকা অনেকের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় অনেক অন্যায় সুযোগ-সুবিধা নেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে, উপদেষ্টা সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন, সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে কোথাও কোন ধরনের অন্যায় করার চেষ্টা করলে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরকারের জায়গা থেকে পুলিশকে আরো বেশি কর্মতৎপর করতে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনকে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছেন উপদেষ্টা।