ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আট শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং সহস্রাধিক আহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। এমনকি ঘরে থাকা শিশুকেও গুলিতে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ওই সব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও প্রায় ৫০ জন সদস্য নিহত হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও। ঘটনাগুলোর যেগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে সেগুলোর তদন্ত শুরু করার জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল আগামীকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে কাজ শুরু করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে ওই দল কাজ করবে এবং তাদের পূর্ণ সহযোগিতা দেবে সরকার।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে শনিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বা পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে তারা কাজ শুরু করবেন।
জাতিসংঘ দলটি একটি টেকনিক্যাল টিম এবং এখানে ফরেনসিক, আইনিসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের এটিই প্রথম। ফলে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
জাতিসংঘ দলের কর্মপরিধি
সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলটি বাংলাদেশে আসছে। স্বাভাবিকভাবে তাদের একটি কর্মপরিধি (টার্মস অব রেফারেন্স) আছে। প্রতিনিধিদলটির কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে- তারা জুলাই ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তদন্ত করবে।
একইসঙ্গে কী কারণে (রুট কজ) এই ঘটনাগুলো ঘটেছে সেটি পর্যালোচনা করবে। এর পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা এগিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কী করা যায় সেটির বিষয়ে সুপারিশ করবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের অগ্রগামী দলটি ঢাকায় এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ছাত্র, সুশীল সমাজ, মিডিয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই সব বৈঠকে বাংলাদেশের জনগণ কী চায়, কী ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত কীভাবে হবে– এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
এর সঙ্গে সুশীল সমাজের ক্ষেত্র, সত্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা, ক্ষতিপূরণ, সমাজে বিভিন্ন মতভেদের মধ্যে মিটমাটসহ নানান সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের বংশোদ্ভূত ব্যক্তি। তিনি তার কাজে অত্যন্ত দক্ষ।’
প্রতিনিধিদলটি কত দিন কাজ করবে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দলটির নিজস্ব একটি ধারণা আছে কতদিন লাগতে পারে। বাংলাদেশ তাদের প্রয়োজনীয় সময় দেবে।’
পরবর্তীতে অন্য কোনও দল আসতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করবে।’
উল্লেখ্য, আগস্টের ২২ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত মানবাধিকার হাইকশিনারের অফিসের এশিয়া- প্যাসিফিক সেকশনের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে।