অন্যান্য সময়ের চেয়ে এইবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঢুকছে ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগই গোনার বাইরে। মিয়ানমার থেকে তাড়া খেয়ে বা থাকতে না পেরে সীমানা পাড়ি দিয়ে যারা আসছেন তারা ঠাঁই করে নিচ্ছেন স্বজনদের ঘরে। আগে এদিকে কাউকে না চিনলেও এখন এপারে রোহিঙ্গাদের স্বজনের অভাব নেই।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, রোহিঙ্গা প্রবেশ নিয়ে দ্রুত সরকারের অবস্থান ঘোষণা করা দরকার, তা না হলে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানো কঠিন হবে।
গত কয়েকদিন ধরে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের চলমান যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। গোলাগুলির পাশাপাশি দুই পক্ষ থেকে ছোড়া হচ্ছে মর্টারশেল, গ্রেনেড-বোমা। চালানো হচ্ছে ড্রোন হামলা। এ অবস্থায় সহিংসতা থেকে বাঁচতে ওপারের হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে গত এক মাসে ১০-১২ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিনে নানাভাবে ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য জানালেও সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন এই সংখ্যা আরও বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই বেশ কঠিন। আগস্টের ৫ তারিখের আগে পরে মিলিয়ে ১৫ দিনের একটা ধাক্কা ছিল যখন সীমান্ত অরক্ষিত ছিল অনেকটা। এর সুযোগ নিয়ে বড় সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশ ঘটেছে। এদের বিষয়ে তেমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই সীমান্তের দুর্বল স্পটগুলো দিয়ে রোঙ্গিরা প্রবেশ করছে। দালালরা কৌশলে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করছে। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রবেশ করছে তারা।
কী পরিমাণ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে এবং সঠিক সংখ্যা নিরুপন সম্ভব হচ্ছে কিনা– প্রশ্নে ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি ) মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, তার এলাকায় এখন পর্যন্ত নতুন করে ১ হাজার ১৩৯ জন রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তিনি তার এলাকায় অনুপ্রবেশকারীদের সুনির্দিষ্ট তালিকা করতে পেরেছেন বলেও জানান।
স্থানীয় সূত্রের তথ্য মতে, টেকনাফের জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপসহ প্রায় ২৫টি জায়গা দিয়ে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে।
বালুখালি ক্যাম্পের সূত্র জানায়, আত্মীয়রা প্রাণভয়ে চলে এসেছে ঠিকই, কিন্তু তারা ক্যাম্পে প্রবেশ না করে বাইরে রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে তাদের ক্যাম্পে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অনেক রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়দের টাকা নিয়ে পার হয়ে আসার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। যারা পথ চেনে ও স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে তাদের একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে সীমান্তে পাঠানো দরকার উল্লেখ করে ‘কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের’ সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, আবারও রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে। ঢুকতে দিলেও তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে তার কঠোর মনিটরিং দরকার। বর্তমান সরকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিচ্ছে না। এমনিতেই আমাদের এখানে রোহিঙ্গারা সবসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাখে। ফলে তাদের অনুপ্রেবেশ ঠেকানো দরকার এবং দ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা আমরা দেখতে চাই।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের দিক থেকে প্রবেশের সংখ্যাটা গণমাধ্যমে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। যারাই ঢুকবেন তারা হিসেবে বাইরে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সে তথ্যটি দিতে পারবে।