Home » জার্মান তরুণীর ব্যাগ ছিনতাই, সাদা প্রাইভেট কার শনাক্ত

জার্মান তরুণীর ব্যাগ ছিনতাই, সাদা প্রাইভেট কার শনাক্ত

ডেস্ক নিউজ:

জার্মান তরুণীর ব্যাগ ছিনতাই হওয়ার ছয়দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ব্যাগ উদ্ধারে একইসঙ্গে পুলিশের বিশেষ একাধিক ইউনিটসহ থানা পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে ওই সড়কের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে একটি সাদা প্রাইভেট কার শনাক্ত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) ভোরে সীমান্ত স্কয়ারের সামনে জার্মান তরুণী সুইন্ডে উইদারল্যান্ড ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগটি থাবা দিয়ে নিয়ে যায়। ব্যাগে ল্যাপটপ, দুটি হার্ডডিস্ক, ক্যামেরাসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ছিল। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার তোলা ছবিগুলো দুটি হার্ডডিস্কে ছিল—যা তিনি জার্মানিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেলেন। তার সব কাজের নিদর্শন ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন।  এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি ছিনতাই মামলা করেন তিনি। মামলা নম্বর ১১। তারিখ ১৪ জুন ২০১৮। ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শুভঙ্কর রায় শুভ মামলাটির তদন্ত করছেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বেশ কয়েকটি বিশেষিত ইউনিট মামলাটি তদন্ত করছে। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, শংকর থেকে রিকশা যোগে এলিফ্যান্ট রোডে তার বাসায় যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন,‘ছিনতাইকারীরা একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করেছে। এসময় জার্মান তরুণী রিকশায় ছিলেন। ওই তরুণী অভিযোগ করার পর অপরাধীদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও থানা পুলিশ তদন্ত করছে।’ প্রাইভেটকারে চালকসহ অন্তত তিনজন ছিনতাইকারী ছিল বলে পুলিশের ধারণা। গাড়িটির পেছনের জানালা থেকে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে সিটি কলেজের দিকে চলে যায়। ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় এই দৃশ্য ধারণ হয়েছে। প্রাইভেটকারটি সাদা রঙয়ের। পুলিশ আশাবাদী শিগগিরই ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে তারা সক্ষম হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শুভঙ্কর রায় শুভ  বলেন, ‘আমরা আশা করছি দ্রুত ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো। এর আগেও এমন একটি ঘটনা তদন্ত করে আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার করেছিলাম।’

ঢাকায় ফটোগ্রাফির ওপর পাঠশালায় ছয় মাসের একটি কোর্স করতে গত ১৭ জানুয়ারি জার্মান তরুণী সুইন্ডে উইদারল্যান্ড ঢাকায় আসেন। পাঁচ মাস তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ছবি তুলেন। ভাসমান হাসপাতাল, পাহাড়, শ্রমজীবী মানুষ ও রোহিঙ্গাদের ছবি তুলে তিনি। জার্মান যাওয়ার একদিন আগে তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাই হওয়া তার ব্যাগে ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক ও ক্যামেরাসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ছিল। যা হারিয়ে তিনি ভেঙে পড়েন। সুইন্ডে বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) ভোরে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর শুক্রবার (১৫ জুন) তিনি জার্মানির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

ইনস্টাগ্রামে একটি স্ট্যাটাসে সুইন্ডে উইদারল্যান্ড লিখেছেন,‘আমি রিকশায় বাসায় ফিরছিলাম। সীমান্ত স্কয়ারের সামনে রিকশাটি আসার পর একটি গাড়ি পেছনের জানালা দিয়ে টান দিয়ে আমার ব্যাগ নিয়ে যায়। আমার ব্যাগটি আমার কাঁধে ছিল। সেটির ভেতরে ল্যাপটপ, ক্যামেরা এবং দুটি হার্ডডিস্ক ছিল।’ সুইন্ডে বাংলাদেশের মানুষকে বন্ধুসুলভ ও অতিথিপরায়ণ হিসেবে তুলে ধরলেও তার সব অভিজ্ঞতা এই ঘটনায় শেষ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশে একা ভ্রমণ করা ঠিক নয় বলেও তার উপলব্ধি হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘রিকশায় ভোরে এবং সন্ধ্যায় কখনও ওঠা উচিত না। এ সময়ে আরোহীরা মোটেও নিরাপদ না।’ ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. পারভেজ ইসলাম  বলেন, ‘তরুণীর ল্যাপটপ, মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাকিং করা আছে। এগুলো ওপেন হলেই আমরা টের পাবো। তবে এখনও এগুলো ওপেন করা হয়নি।’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনাস্থলের একটি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ইতিমধ্যে উদ্ধার করেছি। সীমান্ত স্কয়ারের ভিডিওটি সংগ্রহের জন্য আমরা পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে আবেদন করে সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন,‘একটা গাড়ি আমরা শনাক্ত করেছি, যেটা ওই রোডে কয়েকবার যাওয়া আসা করেছে। তবে তার নম্বর প্লেটটি স্পষ্ট না। আমরা তার নম্বরটি শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ওই সড়কের আরও সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার জামিল আহমেদ বলেন,‘আমাদের ধানমন্ডি জোনাল টিম এটি নিয়ে কাজ করছে। তবে এখনও অগ্রগতি কিছু হয়নি। অগ্রগতি হলে জানাবো।’ পাঠশালার জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ফটোগ্রাফি কোর্সটি তিনি সম্পন্ন করেছিলেন। তাকে প্রশংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে। তার জার্মান যাওয়ার তারিখও নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যেই এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।’ সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মীর মোদ্দাসের হোসেনবলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। আমরা আশা করছি দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে ফেলবো।’ এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি-৭ এ ছিনতাইকারীর হ্যাঁচকা টানে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন হেলেনা বেগম (৩৫)। পুলিশ জানায়, ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগ ধরে টান দিলে তিনি রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খান। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *