পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারত পলায়ন ও সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী- কারও দেখা মিলছে না প্রকাশ্যে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে চলে গেছেন ভারতে। আবার ভারত হয়ে কয়েকজন নেতার যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। যারা দেশ ছাড়তে পারেননি তারা পড়েছেন বিপাকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ইমিগ্রেশন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের অনেকে চেষ্টা করছেন ওমরাহ যাত্রীর ছদ্মবেশে সৌদি আরব পালানোর। এজন্য ইহরামের কাপড় পরে তারা ছদ্মবেশে যাচ্ছেন বিমানবন্দরে। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। গেল কয়েকদিনে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইহরামের কাপড় পরা অবস্থায় চার যুবলীগ নেতা ও কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও মাদক সম্রাট আবদুর রহমান বদির ব্যক্তিগত ক্যাশিয়ারকে আটক করেছে র্যাব-পুলিশ।
সরকার পতনের পর ২২ দিন আত্মগোপনে থেকে ২৭ আগস্ট ওসমানী বিমানবন্দর হয়ে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবের জেদ্দায় যাওয়ার চেষ্টা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শামীম আহমদ ও প্রচার সম্পাদক আবদুর রহমান জামিল।
ওমরাহ পালনের জন্য ইহরামের কাপড় পরে তারা দু’জন ওসমানী বিমানবন্দরে যান। বাংলাদেশ বিমানের বোডিং পাস নিয়ে তারা ইমিগ্রেশন করতে গেলে বাধে বিপত্তি। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদেরকে আটকে দেয়। পরে তাদেরকে কোতোয়ালী থানাপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন দুইজনকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সৈয়দ শামীম ও আবদুর রহমান জামিল গ্রেফতারের তিন দিন পর ৩০ আগস্ট একইভাবে ইহরামের কাপড় পরে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগনা ও বড়লেখা সদর ইউপি চেয়ারম্যান, যুবলীগ নেতা ছালেহ আহমদ জুয়েল এবং বড়লেখা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জালাল আহমদ। ওসমানী বিমানবন্দর থেকে তাদেরকেও আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
পরে তাদেরকে বড়লেখা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে বিচারক যুবলীগের এ দুই নেতাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে বড়লেখায় মামলা রয়েছে।
এদিকে, সর্বশেষ আটকের ঘটনা ঘটে সোমবার ২ সেপ্টেম্বর। ওইদিন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর হয়ে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মাদক সম্রাট আবদুর রহমান বদির ব্যক্তিগত ক্যাশিয়ার সালাহ উদ্দিন। ইমিগ্রেশন শেষ করে তিনি বিমানেও ওঠে পড়েন। কেউ তাকে চিনতে না পারায় তাকে ইমিগ্রেশনে কোন বেগ পেতে হয়নি।
বিমান রানওয়েতে থাকাবস্থায় খবর আসে ভেতরে বদির ব্যক্তিগত ক্যাশিয়ার সালাহ উদ্দিন রয়েছেন। পরে র্যাব-৯ ও ১৫ এর যৌথ অভিযানে উড়োজাহাজের ভেতর থেকে সালাহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। সালাহ উদ্দিনও ইহরামের কাপড় পরে ওমরাহ যাত্রীর ছদ্মবেশে সৌদিআরব পালানোর চেষ্টা করছিলেন।