Home » জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ২লাখ মানুষ পানিবন্দী

জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ২লাখ মানুষ পানিবন্দী

ডেস্ক নিউজ:

সিলেটের জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।  জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৯৬ সেন্টিমিটিার এবং সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরো উপজেলার বন্যায় আক্রান্ত শতাধিক গ্রামের অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। সেখানে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের একাধিক স্থানে ডুবে যাওয়ায় ঈদের দিন বিকেল থেকে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।  শনিবার পর্যন্ত বানবাসী অসহায় লোকজন কোনো ত্রাণ সামগ্রী পাননি। রবিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। অন্যদিকে বন্যা আক্রান্ত এলাকা জকিগঞ্জকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবীতে রবিবার জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ সাংবাদিকদের সাথে বিশেষ মতবিনিময় করে এ দাবী জানিয়েছেন। উপজেলার জকিগঞ্জ সদর, মানিকপুর, বারঠাকুরী, বারহাল, বীরশ্রী, কসকনকপুর, কাজলসার ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার একাধিক ওয়ার্ড, সুলতানপুর ও খলাছড়া ইউনিয়ন আংশিক এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে অন্তত ২৫টি স্থান দিয়ে এবং ডাইক উপছে নানা স্থান দিয়ে পানি হু হু করে লোকালয়ে আসছে। সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ ডাকঘর, প্রাণিসম্পদ অফিস, হাফছা মজুমদার মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সাজ্জাদ মজুমদার বিদ্যানিকেতন, কাজী খালিক উচ্চ বিদ্যালয়, লুৎফুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নান্দিশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ফুলতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনসুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছবড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিকপুর খ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব মাইজকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পঙ্গবট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রহিমখার চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভরন মাদ্রাসা, ভাখরশাল মাদ্রাসা, আনোরাশী মাদ্রাসাসহ ইতিমধ্যে অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মসজিদে ও মাদ্রাসায় পানি ঢুকেছে।
বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ভারতের বরাক ও লোভা নদী হয়ে আকষ্মিকভাবে জকিগঞ্জের সুরমা কুশিয়ারা নদীতে আসে। কিন্তু সুরমা-কুশিয়ারা নদী থেকে হাওরের সাথে সংযোগকারী ৩৭টি খালনালা বন্ধ থাকায় এ দুটি নদীর পানি বিভিন্ন স্থানের ডাইক ভেঙ্গে জনবসতি প্লাবিত হয়। কয়েকটি খালে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইচ গেট বসানোর নামে নিজেদের পকেট ভারী করছে। স্লুইচ গেইট নির্মানের এক বছরের মধ্যেই সবকটি গেট অকার্যকর হয়ে যায়। চলতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড ডাইক মেরামতের প্রকল্প হাতে নিলেও কোন কাজ হয়েনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকদেরকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদকে সাব ঠিকাদার দিয়েছিলো। তিনি কোনো কাজ করেননি। বন্যায় বিভিন্ন মৎস্য খামারের অন্তত ১০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। আউস ক্ষেত ও আমনের চারা, মৌসুমী শাক সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিন দিক ভারত বেষ্টিত জকিগঞ্জের বারঠাকুরী, জকিগঞ্জ সদর ও মানিকপুর ইউনিয়নের একাংশের সাথে জেলা ও উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বানবাসী মানুষের খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের আশংকা করা হচ্ছে। বন্যার্ত কিছু মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ মানুষ মাচার উপর বাস করছেন। রান্নার চুলা ও টয়লেটের সমস্যায় লোকজন বেশী অসহায় হয়ে পড়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজন কুমার সিংহ জানান, রবিবার পর্যন্ত ১২ টন চাল ও দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। উপজেলা সদরে বন্যা তথ্য কেন্দ্র খোলা হবে। বন্যার্তদের সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং এবং প্রতিটি ইউনিয়ন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হবে। সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান রবিবার জকিগঞ্জের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, সরেজমিন আসার কারণে জকিগঞ্জের বন্যার পুরোপুরি চিত্র দেখে গেলাম। সরকার সব ধরণের প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি আশ্বাস দেন। অন্যদিকে শনিবার বিরোধীদলীয় হুইপ ও জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন এমপি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, তিনি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রীর সাথে এবং সিলেটের জেলা প্রশাসককে জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে। ঝূঁকিপূর্ণ ডাইক এলাকা ঘুরে অধিক ঝূঁকিপূর্ণ পৌর এলাকার কেছরী ডাইকের কাজের জন্য তিনি তাৎক্ষণিক নিজের তহবিল থেকে ২০ হাজার টাকা দেন।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *