Home » কী করছে না এই জেন–জি, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে

কী করছে না এই জেন–জি, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে

কী করছে না এই জেন–জি। ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী তরুণ জেন-জিদের প্রশংসায় সবাই এখন পঞ্চমুখ। অথচ এই প্রজন্মকেই ডিজিটাল জালে আটকা পড়া প্রজন্ম হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, এই প্রজন্ম সমাজ–সংসারের প্রতি উদাসীন। বাংলাদেশের সবুজ বুকে ২০২৪ সালের রক্তিম ইতিহাস রচনার সূচনালগ্ন থেকে তাঁরা যেমন সক্রিয় ছিলেন, তেমনি দেশের ক্রান্তিকালেও হাল ধরেছেন তাঁরাই। কী না করে চলেছেন এই কিশোর-তরুণেরা? আবর্জনা পরিষ্কার থেকে রাস্তার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, দেয়ালচিত্র অঙ্কন থেকে পাড়ার নিরাপত্তা বিধান—সব দায়িত্বই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁরা।

একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৪ জুলাই রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাঝরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে নেমে এলেন রাস্তায়। পরদিন পুলিশের অস্ত্রের সামনে বুক পেতে দাঁড়ালেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। রক্তাক্ত হলো বাংলাদেশের হৃদয়। এ ঘটনার কিছুদিন পর সত্তর ছুঁই ছুঁই এক প্রবীণ বলছিলেন, ‘রোজ ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আবু সাঈদের মৃত্যুর অবিশ্বাস্য দৃশ্যটি। অথচ আবু সাঈদের সঙ্গে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক ছিল না, ছিল না কোনো পরিচয়। এভাবেও অকুতোভয় হয়ে উঠতে পারে এক প্রজন্ম!’
এভাবেও একটা তরুণ উঠতে পারে কোটি অচেনা মানুষের ‘আপনজন’!

পারে, পারে, এই জেন-জি সব পারে। জীবন দিতে পারে অধিকারের জন্য, ‘পানি লাগবে, পানি?’ বলে বিক্ষুব্ধ সময়ে পানি বিলিয়ে দিতে গিয়ে নিজের প্রাণটাই বিলিয়ে দিয়ে আসতে পারে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পর এক মা বলছিলেন তাঁর নিরন্তর আতঙ্কময় দিনযাপনের কথা। সেই নারীর দুই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা আন্দোলনে যোগ দেবেন বলে বাসায় তালা আটকে রেখেছিলেন মা! কিন্তু বাস্তবতা হলো, অভিভাবকেরা জেন-জিদের কোনো শিকলেই আটকে রাখতে পারেননি। এমনকি সন্তানদের পাশে অভিভাবকদেরও রাজপথে নেমে আসতে দেখা গেছে।

৫ আগস্ট দুপুরের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থানে ছিল, তার মাঝে আরেক নারীর সঙ্গে দেখা। প্রথমে ভাবছিলাম, হয়তো কোথাও যাবেন, কিন্তু পথ বুঝতে পারছেন না। কথা বলে ভুল ভাঙল। সন্তানকে নিয়ে তিনি এসেছেন লংমার্চের আহ্বানে। সন্তান তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আছেন, মা ওপাশটায় একা। এমন মা কি আর পথ হারাতে পারেন? পথ দেখাতে জেন-জিরা আছে তো। দেশের তরুণীরা যেভাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রেখেছে রাজপথ, গণমাধ্যমে যেভাবে যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছে নানা অসংগতি, অন্যায়—তাতে আর বুঝতে বাকি থাকে না, সময়ের সেরা নারীবাদী বাংলাদেশের এই তরুণীরাই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বিপ্লবের লাল রং ছড়িয়ে দিয়েছেন এই জেন-জি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি সামলানোর ভারও অনেকটাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁরা। ডাকাত ডাকাত রবে পাড়ায় হইচই। দৌড়ে এল জেন-জিরা। ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করেছে এলাকায় ডাকাতের উপস্থিতি আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ড্রোনের এ রকম অভিনব ব্যবহার জানতেন?

নানাভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে আলোচনায় এই জেন–জি। ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে কাজ করার সময় অনেকের এই তরুণদের দিয়েছেন খাবার, পানীয়। সেগুলো অতিরিক্ত হয়ে গেলে আবার বিলি–বণ্টন করেছে রিকশাচালকদের মধ্যে। রাস্তা ঝাড়ু দিতে হবে? চিন্তা নেই, জেন-জি আছে তো! নিজেদের গড়া ইতিহাসের ছবি আঁকতেও নেমে পড়ল তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে। ভবিষ্যতের স্বপ্নও আঁকলেন দেয়ালে। লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপও নিয়েছেন তাঁরা। কী করছে জেন-জি, এই তালিকা বিশাল!

একটা দেশকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে যে প্রজন্ম এখন রাজপথে, তাঁদের জয়জয়কার তো হতেই হবে। ১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই জেন-জিদের হাত ধরেই এখন নতুন স্বপ্নে বিভোর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *