Home » ফিতনার সময়ে মহানবী (সা.)-এর আমল

ফিতনার সময়ে মহানবী (সা.)-এর আমল

পৃথিবী যত‌ এগিয়ে যাচ্ছে নানা রকম ফিতনা তত দৃশ্যমান হচ্ছে। সামাজিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের সব সরঞ্জাম হাতের মুঠোয় থাকায় চারিত্রিক অবক্ষয়ও একদম তলানিতে। দিন যতই যাচ্ছে নানা সংকট যেন আরো বেশি ঘনীভূত হচ্ছে।এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) শেষ জামানায় ফিতনার ভয়াবহ বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, ‘শিগগিরই ফিতনা রাশি রাশি আসতে থাকবে। ওই সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি থেকে বেশি রক্ষিত। আর ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে বেশি বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করবে।তখন যদি কোনো ব্যক্তি তার দ্বিন রক্ষার জন্য কোনো ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তাহলে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬০১)

এই হাদিসের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট যে ফিতনা মানুষের জন্য এক বড় সংকট। তাই ফিতনা থেকে আত্মরক্ষা প্রতিটি মানুষের জন্য অপরিহার্য। নিচে ফিতনা থেকে আত্মরক্ষার কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো—
১. ভালো কাজে আত্মনিয়োগ
সৎকর্ম বা আমালুস সালিহ মুমিনের অন্যতম গুণএই কর্মের মাধ্যমেই একজন মুমিন ফিতনা থেকে বাঁচতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আঁধার রাতের মতো ফিতনা আসার আগেই তোমরা সৎ আমলের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকেলে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে দ্বিন বিক্রি করে বসবে’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৩
২. একাকী জীবন পরিহার করা

একাকী বা বিচ্ছিন্নতাবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে সমাজবদ্ধতা বা মুসলিমদের জামাত আঁকড়ে ধরা। হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুসলিমদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে আঁকড়ে থাকবে।’ আমি বললাম, যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, ‘তাহলে সেসব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাকো এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৭৮)
৩. কোরআন ও সুন্নাহর বিধান আঁকড়ে ধরা
প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ ও যাবতীয় ফিতনা থেকে আত্মরক্ষার আরেকটি কার্যকর উপায় হলো, ইসলামী শরিয়তের দুই উৎস কোরআন ও সুন্নাহর বিধানকে নিজেদের জীবনের জন্য অপরিহার্য করে নেওয়া। যারা ইসলামের এই দুই উৎসকে আঁকড়ে ধরবে তারা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুই বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ তা ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ১৬০৪)
৪. ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়া
যেকোনো অকল্যাণ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া মুমিনের অন্যতম হাতিয়ার। দোয়াকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং না চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। তাই রাসুল (সা.) দুনিয়া ও আখিরাতের সব ফিতনা এবং কবর ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাতে এই দোয়া বেশি পাঠ করতেন।
উচ্চারণ :আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া মিন আজাবিন নারি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে, জাহান্নামের শাস্তি থেকে, জীবন ও মরনের ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে। (বুখারি, হাদিস : ১৩৭৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখুন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *