Home » এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জামালপুর জেলা কারাগার, রাতেও থেকে থেমে চলছে গুলি

এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জামালপুর জেলা কারাগার, রাতেও থেকে থেমে চলছে গুলি

জামালপুরে জেলা কারাগারের জেলারসহ কারারক্ষীদের জিম্মি করে কারা ফটক ভেঙ্গে কয়েদিরা পালানোর চেষ্টা করায় ব্যাপক গোলাগুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১টা থেকে জেলা কারাগারে এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। জেলারসহ জিম্মি কারারক্ষীদের উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জেলা কারাগার, রাতেও থেমে থেমে চলছে গুলি।

জামালপুর জেলা কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বেশ কিছু কয়েদি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মারামারি করে। এর মধ্যে একটি গ্রুপের কয়েদিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে এসে কারা ফটকের চাবি চায়। এ সময় জেলার আবু ফাত্তাহ কয়েদিদের চাবি দিতে না চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর হামলা করে তাকে জিম্মি করে কারাগারের ভেতরের ফটক ভেঙ্গে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গোলাগুলি শুরু করে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পার্শ্ববর্তী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা থেমে থেমে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে কারাগারের অভ্যন্তরে অগ্নিসংযোগ করে কয়েদিরা। আগুনের ধোঁয়ায় পুরো কারাগার এলাকা ছেয়ে যায়। এ সময় কয়েদিরা বাকি কারারক্ষীদের ওপরও হামলা করে তাদের জিম্মি করে ফেলে। কারাগারে হট্টগোল এবং গুলির শব্দ পেয়ে ঠিক পাশেই অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকা সেনাবাহিনী এগিয়ে এসে কারাগারের চারপাশ ঘিরে ফেলে। এ সময় কারাগারের ভেতর থেকে কয়েদিরা ‘আমাদের বাঁচান’ বলে আর্তনাদ করতে থাকে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কারাগারের দেয়ালের ওপর দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ সময় মাইকিং করে কয়েদিদের শান্ত থাকা ও পালিয়ে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।

এদিকে কয়েদিদের হাতে দুই ঘণ্টা বন্দি থাকার পর বেশ কয়েকজন কয়েদির সহযোগিতায় জেলার আবু ফাত্তাহ বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। পরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর কারাগারে কয়েদিদের কাছে বন্দি থাকা ১৪ কারারক্ষী এবং ৩ নারী কারারক্ষীকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে রুকনুজ্জামান (৫০), সাদেক আলী (৪৫) ও জাহিদুল ইসলাম (৪১), তিন কারারক্ষী কয়েদিদের হামলায় আহত হয়েছে এবং একজন গুলিবিদ্ধ থাকায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বন্দি সব কারারক্ষীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এই প্রতিবেদন দেওয়া পর্যন্ত কারাগারের ভেতর বিদ্রোহী কয়েদিরা শান্ত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেনি। বেশিরভাগ কয়েদি নিজের সেলে চলে গেলেও বিদ্রোহী কয়েদিরা এখনও পালানোর চেষ্টায় বাইরে অবস্থান করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি চলছে। সেই সঙ্গে কারাগারের ভেতর থেকে কয়েদিদের আত্মচিৎকার ভেসে আসছে।

জামালপুর জেলা কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ আরও জানান, আমরা যেহেতু এখনও কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি, তাই কতজন আহত বা নিহত হয়েছে সেটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে বন্দিদের সংখ্যা নির্ণয়ের পর হতাহতের সংখ্যা বলা যাবে। বর্তমানে এই কারাগারে ৬৬৯ জন কারাবন্দি রয়েছে। কোনও রাজনৈতিক বা জঙ্গি আসামি নেই। আর কয়েদিদের কেউ এখনও পালাতে পারেনি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *