শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরঃ
বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ঘর-বাড়ি ও ফসল। ফসল নষ্ট হওয়ায় খাদ্য সংকটে ভূগছেন অনেকেই। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা বানভাসি মানুষ। ঈদের আনন্দ যেনো তাদের হতাশায় পরিণত হয়েছে। অনেক উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করার জায়গাও নেই অনেক এলাকায়। টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটে নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন করে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলা, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলা, সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল অঞ্চল এবং হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন রয়েছে বিভিন্ন উপজেলার।
আমাদের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙ্গণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার ৫ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ৬টি ভাঙনের পর আরও নতুন করে আরও ২টি ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
আমাদের সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার হিসেব অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১ দশমিক ৯৮ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবাহ ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকা রাস্তা ঘাট পানির নিচে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার শেরপুর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারিঘাট থেকে গোয়াইনঘাট রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে ১০.৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে যা বিপদসীমা মাত্রার ৪০ সেন্টিমিটার বেশি। এছাড়া আমাদের ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্যাম্পেরঘাট, বোগলা, আন্দাইরগাও, বালিছড়া, সোনাচরা, তেরাকুরি, রামনগর গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩০০ একর আউশ ফসল তলিয়েছে। বন্যায় ধান, বিভিন্ন ফসলাদি, পুকুরের মাছ, থাকার ঘর-বাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে তাঁদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বন্যার্তরা। ঈদের এই সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় অন্যত্র যেতে দেখা যায় এইসব এলাকার মানুষদের। ঈদের আনন্দের চেয়ে তাদের জীবন রক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন চালানোই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সিলেটের আকাশ। পানিবন্দি মানুষদের আহাজারিতে সিলেটে ঈদ আনন্দ মলিন হয়ে গেছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান