Home » স্বদেশ দেখার ইচ্ছায় ঘুমধুম সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ভিড়

স্বদেশ দেখার ইচ্ছায় ঘুমধুম সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ভিড়

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে গত সাড়ে ৬ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তারা ২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিপুল সংখ্যক এই বাস্তুচ্যুত মানুষের গত ১৪টি ঈদ কেটেছে পরদেশে।

ওপারে এসব রোহিঙ্গাদের গ্রাম-বসতি ছিল। রয়েছে জন্ম, শৈশবের বেড়ে উঠার স্মৃতি। তাই বার বারই এসব রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরতের আকুতি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে প্রার্থনা করে আকুতি জানিয়েছে সবাই। কিন্তু এসব রোহিঙ্গারা জানেন না কখন বা কবে নাগাদ তারা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবেন। বিশেষ করে বর্তমানে মিয়ানমারে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নবাদীর সঙ্গে চলমান গৃহযুদ্ধ এই স্বদেশে প্রত্যাবাসনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে নতুন করে।

তারপরও শেকড়ের টান বা স্বদেশের মাটির দেখার ইচ্ছা যেন মন থেকেই ভুলতে পারেননি তারা। ফলে গত তিনদিন ধরে এসব রোহিঙ্গাদের ভিড় করতে দেখা গেছে ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকায়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের অনেক অংশেরই পরিষ্কার দেখা মেলে। এরইমধ্যে এই সীমান্ত এলাকায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক হয়ে সীমান্ত পর্যন্ত দৃষ্টি নন্দনভাবে তৈরি করা হয়েছে চার লেনের মৈত্রী সড়ক। একদিকে সড়কের সৌন্দর্য অপর দিকেই মিয়ানমারের ভূমি দেখার ইচ্ছায় এসব রোহিঙ্গারা সড়কটিতে ভিড় করেছেন।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকালে ওই সড়কে দেখা মিলেছে কয়েকশ রোহিঙ্গার। যেখানে স্থানীয় লোকজনের আনাগোনাও ছিল। ফলে ঈদের দ্বিতীয় দিন সড়ক জুড়ে দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ওখানে কথা হয় উখিয়ার ২০ নম্বর ক্যাম্প থেকে আসা বৃদ্ধ আবদুল গফুরের সঙ্গে।

তিনি জানান, স্বদেশে কখন ফিরতে পারেন জানান না। ওপারে মাটিতেই তার জন্ম। যেখানে কাটিয়েছেন ছোটকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত। ফলে ওপারের মাটি-গাছ আর গ্রামের দৃশ্যটি একবার দেখার ইচ্ছা নিয়ে সীমান্তে যাওয়া তার।

রফিকুল ইসলাম নামের এক রোহিঙ্গা যুবক জানান, গত সাড়ে ৬ বছর ধরে নিজের এলাকার বাইরে। এরমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রোহিঙ্গা চুরি করে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের আসা-যাওয়া করলেও বেশিভাগ আর স্বদেশের মাটি দেখার সুযোগ পাননি। তাই অনেকের মত তিনিও মিয়ানমারের দৃশ্য দেখতে সীমান্ত এলাকায় ঘুরতে এসেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আজিজ জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত দফায় দফায় হাজার-হাজার রোহিঙ্গাদের সীমান্তের সড়কটিতে ঘুরতে আসতে দেখা গেছে। এসব রোহিঙ্গারা সীমান্ত এলাকায় এসে মোবাইলে ওপারের ছবি তুলে, ঘুরে-ফিরে আড্ডা দিচ্ছে। পরে আবার ক্যাম্পেও ফিরে যাচ্ছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *