প্রায় ছয় মাস ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনিরা শোক ও অনাহারের মধ্যেও পবিত্র রমজান মাস পার করেছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) তারা পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে।
ফিলিস্তিনিরা ঈদুল ফিতরের ঐতিহ্য অনুসরণ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু যুদ্ধের বাস্তবতা তাদের এই পবিত্র উৎসব পালনের জন্য খুব একটা স্বস্থির জায়গা রাখেনি। ঈদেরদিনও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেমে থাকেনি। ভয়ে , আতঙ্কে, অনাহারে, নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ উদযাপন করেছে ফিলিস্তিনিরা।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের একজন দোকানদার আহমেদ ইসমাইল আল জাজিরাকে বলেন ‘পবিত্র অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য কোন আনন্দ বা ইচ্ছা আর বেঁচে নেই। এমনকি বাচ্চাদের মধ্যেও আগের মতো খেলনার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়।’
রাফাহ শহরের একজন বাস্তুচ্যুত জাবর হাসান বলেন, ‘আমরা সব দিক দিয়েই ভুগছি। মানুষের জন্য বেঁচে থাকাই এখন কঠিন। তারা পরিবারকে খুব কম সময়ই খাওয়াতে পারে । আমরা এখন আর ঈদ বা উদযাপন বা অন্য কোনো আনন্দের কথা ভাবি না।’
আল জাজিরার তারেক আবু আজউম বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক ড্রোনগুলো মাথার ওপর দিয়ে চক্কর কাটছে। তা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিরা আজ এখানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছে । তাদের চারপাশে প্রচুর ধ্বংস, দুঃখ ও শোকের মধ্যেও তারা একত্রিত হচ্ছে। একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।’
অনেক ফিলিস্তিনি গত বছর যেখানে তারা নামাজ পড়েছিল তার ধ্বংসাবশেষের পাশে তাদের ঈদের নামাজ আদায় করেছে।
গাজার একজন ডাক্তার সালেহ আল-আমেস বলেন, ‘আমরা আমাদের মাটি ধরে রেখেছি। গভীর বেদনা ও শোক সত্ত্বেও আমরা আমাদের আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি অবিচল। পুরো বিশ্ব নীরবে দেখছে। কিন্তু আমরা আমাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করব না।’
এক ফিলিস্তিনি শিশু বলেছে এ বছর সে কোন আনন্দ অনুভব করেনি।কেননা তার বাবা ঈদে তার জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে পারেনি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে সে খেলতে পারেনি। সে বলেছে, ‘আমি আশা করি যুদ্ধ শেষ হবে। আমরা ঘরে ফিরে যাব। আমরা নতুন পোশাক পরে আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সামনের ঈদ উদযাপন করতে পারবো।’
রাফাহতে শিশুদের কিছু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছে শিল্পীরা। সঙ্গীতজ্ঞ মুসাব আল-ঘামরি বলেন, ‘ঈদ এমন একটি দিন যা আমরা মিস করতে পারি না। বোমা হামলা, ভয় ও ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও আমরা ঈদ উদযাপনের জন্য এই শিশুদের জন্য আনন্দ আনতে চাই।’
ফিলিস্তিন ঈদ
বার্তা বিভাগ প্রধান