মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্ফোরিত গোলা ও মর্টার শেলের শব্দে রবিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে আবার কেঁপে উঠেছে টেকনাফ সীমান্ত। এর আগে শনিবার সারা দিনে টেকনাফ সীমান্তে প্রায় ৪০টি গোলা ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়। শনিবার রাত ২টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ থাকার পর ফের আসতে থাকে গোলা ও মর্টারের বিকট শব্দ। সকাল ৮টার পর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন অংশে অন্তত ১০টি মর্টার শেল ও গোলার শব্দ শোনা গেছে। এতে করে সীমান্তাঞ্চলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে চারমাইল এবং উত্তরের নাকফুরা এলাকা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
শনিবার বিস্ফোরণের শব্দ নাফ নদের এপারে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম থেকে শোনা গেছে। তবে রবিবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যং পাড়া, কেকেপাড়া, চৌধুরী পাড়া, জালিয়া পাড়ায় থেমে থেমে গোলা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত চলছে। সীমান্তসংলগ্ন বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। এসব এলাকায় পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে জান্তার বাহিনীগুলো। ফলে সেখানে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘাত হচ্ছে। ব্যবসার কাজে টেকনাফে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা নিরাপত্তার কারণে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে সম্মত হননি।
টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যং পাড়া এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, মর্টার শেল নিক্ষেপের কারণে শনিবার থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের এপারের বাড়িঘরগুলো কেঁপে কেঁপে উঠেছে।এতে করে সীমান্তের এপারে বসবাসরত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। তা থেমে থেমে শনিবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে। বিকট বিস্ফোরণের শব্দ নাফ নদের এপারে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, পুরান বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে শোনা গেছে। ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ওপারের দুই মাসের সংঘাতে টেকনাফ সীমান্তের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে মর্টার শেলের বিস্ফোরণে টেকনাফের কয়েকটি গ্রাম কেঁপে ওঠে।
টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে আবারও গোলাগুলি সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সংঘাতের কারণে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে ১১মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য। তারা সবাই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১-বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হেফাজতে রয়েছেন। এর আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
বার্তা বিভাগ প্রধান