রবিবার (৩১ মার্চ) রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সিলেট ও সুনামগঞ্জে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় এ শিলাবৃষ্টি। একেকটি শিলা ছিলো বিশাল আকারের।চৈত্রের শেষে এমন শিলাবৃষ্টি বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শিলাবৃষ্টির পর থেকে সিলেটের প্রায় সব স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- প্রবল ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলমান রয়েছে। কারো এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে থাকলে বা ব্যানার ফেস্টুন অথবা গাছের ডাল-পালা বৈদ্যুতিক লাইনে পরে থাকলে তাদেরকে দ্রুত এই নাম্বারে ১৬২৫-০৩৮৭৮৪) অবগত করতে।জানা যায়, রবিবার তারাবিহের নামাজের পর সিলেট মহানগরসহ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ফলে রাস্তায় থাকা সাধারণ মানুষ, পথচারী ও ঈদের কেনাকাটায় যাওয়া লোকজন বিপাকে পড়েন। শিলায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনের গ্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একেকটি শিলা আকারে অনেক বড় বড় ছিলো।এর আগে সিলেটে এরকম শিলাবৃষ্টি আগে দেখা যায়নি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকেই। অনেকেই গাড়ি ভাংচুরের ছবি আপলোড দিয়েছেন। কারও কারও বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালার কাঁচের গ্লাস শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেকের ছাদে থাকা পানির ট্যাংক ও পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানা গেছে। আহত হয়েছেন খোলা জায়গায় ও রাস্তায় অবস্থান করা কেউ কেউ।সিলেট মহানগরের টিলাগড় এলাকায় ঝড়ে আটকা পড়া বেসরকারি চাকরিজীবি সিরাজ উ্দ্দিন বলেন, যে বড় আকারে শিলা পড়েছে; তা আমরা ছোটবেলায় দেখেছি। এত বড় আকারে শিলাবৃষ্টিতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের পশ্চিমদর্শা এলাকায় একটি গ্যাসের রাইজারে আগুন লেগে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জে ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে হাওরের আগাম জাতের ধানের ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।শান্তিগঞ্জ উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন- ঝড়ে পাগলা বাজারের টিনশেডের কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে গাছপালা ভেঙে পড়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সুনামগঞ্জ শহরের ইকবালনগরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যানচলাচল বন্ধ ছিল। আধা ঘণ্টার ব্যবধানে রাত সোয়া ১১টায় আবারও বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়।ঝড়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পাগলা, কান্দিগাঁও, আসামপুর,বাঘেরকোনাসহ একাধিক গ্রামের অন্তত ২০ টি কাঁচা, আধাপাকা ঘর লন্ডভন্ড হয়েছে বলে জানা গেছে। ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাগলাবাজারের। বাজারে সড়কের দুইপাশের অস্থায়ী দোকানপাট ঝড়ের বেগে লন্ডভন্ড হয়ে যায়।এদিকে, সুনামগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকায় চলন্ত সিএনজির উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় চালকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বৈষভেড় গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের হাছন তোরণ এলাকায় একাধিক গাছ ভেঙ্গে সড়কে পড়ায় দুইপাশের পরিবহন আটকে তীব্র জানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টা ব্যাপী ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের চেষ্টায় সড়কে জান চলাচল স্বাভাবিক হয়।সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নিরুপন রায় চৌধুরী বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে আহত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫ জন রোগী আসেন। তাদের মধ্যে সাদ্দাম নামের এক যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানি মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। রয়েল নামের আরেক যুবক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ঝড়ের সঙ্গে মাঝারি শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে হাওরের আগাম ধানের জাতের কিছু ক্ষতি হতে পারে। আমরা সব জায়গায় খবর পাঠিয়েছি। তবে এখন হাওরে ফসলের ক্ষতি তেমন হবে না বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “রাত সোয়া ১০টায় তীব্র বেগে ঝড় আসে। সঙ্গে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঝড়ে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
প্রতিনিধি