Home » কেউ ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত, কেউ বিক্রির প্রস্তুতিতে

কেউ ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত, কেউ বিক্রির প্রস্তুতিতে

বছর ঘুরে আবারও এলো পবিত্র মাহে রমজান। অন্যান্য বছরের মতো এবারও রমজানের প্রথম দিনেই পুরান ঢাকায় দেখা গেলো ইফতার তৈরির ব্যস্ততা। কলতাবাজার থেকে শুরু করে রায়সাহেব বাজার, নাজিরাবাজার, চকবাজার, নারিন্দাসহ সব জায়গায় তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের খাবার। দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। অন্যরা ব্যস্ত ইফতার বিক্রির প্যান্ডেল তৈরিতে আর খাবার সাজানোয়।

স্থানীয়রা জানান, আদিকালে এখানে ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’। এই শব্দটি অনেক পাঠকের কাছে নতুন মনে হলেও রমজান মাসে পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দারা এই শব্দ ব্যবহারে এখনও অভ্যস্ত।

IMG_20240312_124602
ইফতারের জন্য নানা রকম খাবার তৈরিতে সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাবুর্চিরা

ইফতারের জন্য ঘরে ঘরে খাবার তৈরি হলেও বাইরের খাবারের আকর্ষণ যেন ছাড়ে না পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের। সে কারণেই রমজান মাসজুড়ে তাই এই আদি জনপদে ইফতার সামগ্রীর মেলা বসে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আজ (মঙ্গলবার) রোজার প্রথম দিনেই দেখা গেছে ইফতার তৈরির ব্যস্ততা।

IMG_20240312_123718
ছোটো-বড় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টে চলছে ইফতারের খাবার তৈরির প্রস্তুতি

হরেক রকম ইফতারের মধ্যে রয়েছে আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকা কাবাব, কোতা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, সুতি কাবাব, জিলাপি, শাহি জিলাপি, নিমকপারা, সমুচা, হালুয়া, হালিম, দইবড়া, কাশ্মিরি শরবত, ধুতনান, ৩৬ উপকরণের মিক্সড খাবার ‘বড়বাপের পোলায় খায়’ ইত্যাদি।

IMG_20240312_124639
পাড়ায়-মহল্লায় দেদার চলে বাইরের ইফতার

পুরান ঢাকার ইফতারি তৈরির কারিগর হারুন ও মহিউদ্দিন জানান, সকাল থেকেই নানা ধরনের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জিলাপি, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, ছোলা, আলুর চপ, শাকফুলুরি (লাল শাকের বড়া), টিকা কাবাব, জালি কাবাব, চিকেন ফ্রাই, চিকেন চাপ, বুন্দিয়া, রকমারি হালিম, চিকেন তেহারিসহ নানান ধরনের মুখরোচক পদ তৈরি করছেন তারা।

ইফতার তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন বলেন, সকাল থেকেই নানা উপকরণ রেডি করে হরেক রকম ইফতার আইটেম তৈরি করছি। রোজা রেখেই এসব কাজ করে যাচ্ছি।

IMG_20240312_124645
নতুন-পুরনো নানা পদের খাবার তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকায়

পুরান ঢাকার কলতাবাজারে শফিকুল ইসলাম নামে এক কারিগরকে দেখা যায় বুন্দিয়া ভাজতে। আর কী কী তৈরি করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপিসহ নানা ধরনের ইফতার সকাল থেকে আমরা তৈরি করে রেখেছি। খাবার তৈরির কাজ এখনও চলছে। দোকানের বাকি স্টাফ যারা আছে তারা প্যান্ডেল সাজাচ্ছেন এসব খাবার বিক্রির জন্য।

IMG_20240312_124948
ইফতার বিক্রির জন্য বানানো হচ্ছে রঙিন প্যান্ডেল

পুরান ঢাকার খ্যাতনামা বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সামনে দেখা যায় ইফতার বিক্রির জন্য আলাদা করে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে। জনসন রোডের স্টার হোটেলসহ ওয়ারির বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টের সামনে এ দৃশ্য দেখা যায়। স্টার হোটেলের ম্যানেজার টিপু সুলতান বলেন, প্রতিবছরই আমরা ইফতার বিক্রি জন্য আলাদা করে প্যান্ডেল তৈরি করি। এবারও সেটা তৈরি হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা পুরান ঢাকার ভোজন রসিক মানুষদের মজাদার ইফতারের আইটেম উপহার দেবো। আমাদের এখানে দাম তেমন বাড়েনি, আগে যেমন ছিল এখনও তাই আছে। হাতে গোনা দু-একটা প্রোডাক্টের দাম বেড়েছে।

IMG_20240312_125119
ইফতার বিক্রির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সকাল থেকেই

ইফতার বিক্রির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ইফতার তৈরির সামগ্রী কিনতে কষ্ট হয়ে গেছে। নাজিরাবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইদুল হক বলেন, আশা করছি প্রতিবারের মতো এবারও জমজমাট ইফতারি উপহার দিতে পারবো। বিভিন্ন পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে, আর কিছু আইটেমের দাম ঠিক রেখে আকারে ছোট করা হয়েছে। সব জিনিসপত্রে দাম বাড়তি। তাই আগের দামে ইফতারি বিক্রি করা সম্ভব না। যেসব জিনিসের দাম বাড়ানো সম্ভব না সেসব আকারে ছোট হয়ে গেছে।

IMG_20240312_124132
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যস্ততা

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *