সিলেটিদের কাছে লন্ডন তথা যুক্তরাজ্য স্বপ্নের জায়গা। নিজের ভিটে-মাটি বিক্রি হলেও লন্ডন যেতে চান অনেকে। কিন্তু সেই স্বপ্নের দেশে এখন কাজের তীব্র সংকট। ফলে বিপাকে পড়েছেন নতুন করে সে দেশে যাওয়া সিলেটিরা।
জানা গেছে, ব্রিটেনে সরকার-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি যেখানে ঘণ্টাপ্রতি ১১ পাউন্ড ৪৪ পয়সা। সেখানে অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ- প্রতি ঘণ্টায় ৫ পাউন্ডেও কাজ পাচ্ছেন না হাজারো সিলেটি।
গত তিন বছরে ছাত্র ও কাজের ভিসায় পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে গেছেন কয়েক হাজার সিলেটি। এদের বড় অংশই বসবাস করেন লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানী লন্ডনেই দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ থাকলেও এ শহরে মাসের পর মাস কাজ না পেয়ে বেকার অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অনেক সিলেটি। ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কাজের জন্য হাহাকার। চেনা-পরিচিত পর্যায়ে যোগাযোগ করেও মিলছে না কাজ। দেশ থেকে যাওয়ার পর মাসের পর মাস কেটে গেলেও মিলছে না কাজের সন্ধান।
ফেসবুকে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি গ্রুপে নাম প্রকাশ না করে, সহযোগিতা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন লন্ডনে যাওয়া একজন। তিনি লিখেছেন, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এ দেশে এসেছিলাম কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায়। এখন দুবেলা খাওয়া আর একটা ছাদের নিচে থাকাটাই বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ মাস ধরে আমি মেইন অ্যাপ্লিকেন্ট, কিন্তু আমার কোনও কাজ নেই। হন্যে হয়ে রেস্টুরেন্ট, কন্সট্রাকশন, অ্যাগ্রিকালচার সাইটে কাজ খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। আমার স্ত্রী ডিপেনডেন্ট হিসেবে আসার পর শুধু এক মাস হাউজকিপিংয়ের জব করেছিলেন, এখন সেও বেকার।
আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘হাত প্রায় খালি। তাই গত মাস থেকে লন্ডনে এক আত্মীয়ের বাসায় আছি। এখন তারা এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে- অন্য জায়গায় রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য। এখন কোথায় যাবো, কী করবো, কিছুই আর মাথায় আসছে না। এক সপ্তাহ পর রাস্তায় থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।’
আকুতি জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘যদি কোনো দয়ালু ভাই-বোন আমাদের কাউকে যেকোনও শহরে একটা কাজ দিয়ে হেল্প করতেন, সারা জীবন এই উপকারের কথা ভুলতাম না।’
এদিকে, লন্ডনে বেশি লোকজন চলে যাওয়ায় বিষয়টিকে পুঁজি করে বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র মজুরিতে মানুষ খুঁজে নিচ্ছে কাজে। ঘণ্টায় পাঁচ পাউন্ডও মজুরি দিচ্ছেন না মালিকরা। রেস্টুরেন্টগুলোতে দিনে আট ঘণ্টার বেশি, সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১২০ পাউন্ড।
এছাড়া অনেকেই লন্ডন পাড়ি দেওয়ার জানতে পেরেছেন- যেসব এজেন্সির মাধ্যমে তারা সেখানে গেছেন সেগুলো ভুয়া। লন্ডনে অনেক এজেন্সির অফিস-ই নেই। ফলে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কেউ নেই লন্ডনে।
ভুক্তভোগিরা বলছেন- ‘নতুন যারা লন্ডনে আসছেন, তাদের থাকার জায়গা ও কাজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য করছেন আমাদের একশ্রেণির মানুষ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে ভাড়া নিতে হয়, নতুন আসা লোকদের। একটি রুমে পার্টিশন দিয়ে, গার্ডেনে রুম তুলে ভাড়া দিচ্ছেন তারা নতুনদের কাছে। দেশ থেকে যারা বিভিন্ন ভিসায় এসেছেন- তারা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরির অর্ধেক ঘণ্টায় পাঁচ পাউন্ডও বেতন দিচ্ছেন না দেশি নিয়োগদাতারা।
প্রায় ১ বছর আগে লন্ডন গেছেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের নাজিরবাজার এলাকার তরুণ হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। সম্প্রতি তার মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি সিলেটভিউ-কে জানান- আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে কেয়ার ভিসায় এখানে (লন্ডনে) এসেছি, এসে দেখি এখানে তাদের কোনো অফিসই নেই। আমি প্রায় ৫ মাস বেকার ছিলাম এখানে। এখন একটি প্রাইভেট মাদরাসায় নামমাত্র সম্মানিতে পড়াই। লাখ লাখ টাকা খরচ করে স্বপ্নের এই দেশে এসে এমন অবস্থা হয়েছে যে- না পারছি সইতে, না পারছি কাউকে কিছু বলতে।
বার্তা বিভাগ প্রধান