Home » রংপুরে দুই দিনব্যাপী সনাক আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রংপুরে দুই দিনব্যাপী সনাক আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকরতা, আইনের কার্যকর প্রয়োগ, সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা, জনসম্পৃক্ততার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং অর্থ পাচার রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত নাগরিকদের দুর্নীতিবিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সদস্যবৃন্দ। ‘দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অবিচার: নাগরিক ভাবনা’ শ্লোগান নিয়ে রংপুরে অনুষ্ঠিত সনাক আঞ্চলিক সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যগণ এ দাবি জানান। রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ১২টি সনাক’র দেড় শতাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে দুই দিনব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী এই আঞ্চলিক সনাক সম্মেলন আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) শেষ হয়েছে।
সনাক সম্মেলনে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সনাক রংপুরের সভাপতি ড. শাশ্বত কুমার ভট্টাচার্য এবং টিআইবি’র সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস। সম্মেলনে সনাক রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, মধুপুর ও সাভার এর প্রতিনিধিগণ ‘দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অবিচার ও দুুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন: নাগরিক ভাবনা’ এবং ‘টিআইবি’র চলমান কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন সফল করতে করণীয় বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির কারণে আমাদের জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্নীতি না হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো ৩ শতাংশ বেশী হতে পারতো। দেশের অধিকাংশ মানুষই তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় মনে করে ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। সেবা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাঁধে বিত্তশালীদের ঋণের বোঝা, অথচ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বর্তমানে দুর্নীতির একটি চিত্র অর্থ পাচারের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। বিশে^ যে সকল দেশ অর্থ পাচারের শীর্ষে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। যদি অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যেতো তাহলে বছরে দেশের ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ রক্ষা করা যেত। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না বলে অর্থ পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয় না। জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের আরও কার্যকর করার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকারের সংস্থাগুলোকে দুর্নীতি প্রতিরোধে একসাথে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ বা প্রয়োজনে নতুন আইনি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাধারণ জনগণকে আরও সচেতন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
“দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অবিচার: নাগরিক ভাবনা” শীর্ষক আলোচনায় সনাক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সনাক নীলফামারীর সদস্য মো. আকতারুল আলম রাজু, সনাক দিনাজপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুল ইসলাম, সনাক লালমনিরহাটের সদস্য ডাঃ মোঃ কাসেম আলী, সনাক গাইবান্ধার সদস্য অধ্যাপক মাজহারউল মান্নান, সনাক চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদস্য সাইফুল ইসলাম রেজা, সনাক রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ড. সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার, সনাক নাটোরের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, সনাক কুড়িগ্রামের সভাপতি আহসান হাবীব নীলু, সনাক মধুপুরের সদস্য মোঃ বজলুর রশিদ খান, সনাক সাভারের সভাপতি অধ্যাপক দীপক কুমার রায়, সনাক বগুড়ার সদস্য জাকিয়া সুলতানা এবং সনাক রংপুরের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু প্রমুখ।
দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সনাক সাভারের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মো: আব্দুল খালেক, সনাক মধুপুরের সহ-সভাপতি বাপ্পু মৃ, সনাক কুড়িগ্রামের সহ-সভাপতি প্রতিমা চৌধুরী, সনাক রংপুরের সহ-সভাপতি প্রফেসর মো: শাহ্ আলম, সনাক নাটোরের সদস্য জনাব মো: আব্দুর রাজ্জাক, সনাক নীলফামারীর সহ-সভাপতি মো. মিজানুর রহমান লিটু, সনাক রাজশাহীর সদস্য আলিমা খাতুন লিমা, সনাক চাঁপাইনবাবগঞ্জের সভাপতি সেলিনা বেগম, সনাক বগুড়ার সহ-সভাপতি নাসিমা আখতার জাহান, সনাক গাইবান্ধার সহ-সভাপতি জিয়াউল হক কামাল, সনাক লালমনিরহাটের সদস্য স্বপ্না জামান এবং সনাক দিনাজপুরের সদস্য প্রফেসর আব্দুল জলিল আহমেদ প্রমুখ। এছাড়া সম্মেলনের এ পর্বে সনাক রংপুরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রুপের ০৮ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বক্তাগণ দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও গতিশীল করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা দুর্নীতিবাজদের কাছে পরাজিত হবো না তাহলে নিজেদের কাছেই পরাজিত হয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকরতা নিশ্চিত হলে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে এবং সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় তা পূরণ করা সম্ভব হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *