যুক্তরাজ্যে জাতিগোষ্ঠী হিসেবে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা সবচেয়ে গিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ বাংলাদেশি খুবই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাস করছেন। এটা সব ব্রিটিশ-এশিয়ানের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেশি, যা ২৩ শতাংশ বলে এক সমীক্ষার ফলাফলে উঠে এসেছে।
ব্রিটেনে আবাসন সমস্যা নতুন ঘটনা নয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ। মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাড়ির মর্টগেজের মাসিক কিস্তি দ্বিগুণ হয়েছে অনেকের, জীবনযাপনের সব ধরনের ব্যয়ে নাজেহাল সবাই, তার ওপর আবাসিক সংকটের সমাধান না পাওয়ায় পরিবারের ভোগান্তি এখন চরমে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও কেয়ার ভিসায় আসা বাংলাদেশিরা পার করছেন আরও চরম দুঃসময়।
সম্প্রতি ওএনএস (অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস) এক জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, লন্ডনের কাউন্সিলগুলোয় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা দেশটির অন্য এথনিক মাইনরিটি কমিউনিটির চেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছেন। বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যা নিয়ে ভুগছেন কয়েক লাখ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি। চার-পাঁচ জনের পরিবার নিয়ে অনেকে চার বছরের বেশি সময় ধরে হোস্টেলের এক রুমে বসবাস করছেন। আবার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে নিয়ে এক রুমে দিন পার করছেন অনেক মা-বাবা।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে বসবাস করেন বাংলাদেশি নারী ইয়াসমিন বেগম। আড়াই বছর ধরে নিজ কাউন্সিলের বাইরে এক রুমের ভেতরে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
জানতে চাইলে এই সিঙ্গেল মা বলেন, এখানে নানা সমস্যায় জর্জরিত আমরা। ওয়াশরুম শেয়ার করতে হয়, রুমে হিটিং ঠিকমতো চলে না, দেয়াল স্যাঁতসেঁতে। আমার দুই সন্তান একটি দোতলা খাটে ঘুমায়। মালামাল সব বাইরে মাসিক ভাড়ার স্টোরেজে রাখি। কবে স্থায়ী ঘর পাবো, আদৌ পাবো কি না, তা জানি না।
জরিপে আরও দেখা গেছে, সাধারণত কাউন্সিলের (বারা) ঘরের জন্য পরিবারকে আবেদন করতে হয়। কিন্তু একটি ঘর পেতে অপেক্ষমাণ তালিকায় কেটে যায় ১০ বছর। তবু মিলছে না সুযোগ। এ ছাড়া অনেকে হোস্টেলে বসবাস করেন। সেখানে রান্নার ব্যবস্থা নেই আবার একটি ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হয় ১০ জনকে মিলে।
ব্রিটেনে প্রায় ৩৪ শতাংশ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সরকারি সামাজিক আবাসন প্রকল্পে বসবাস করেন, যা ব্রিটিশ-ভারতীয়দের তুলনায় সাত গুণ বেশি। আর সামাজিক আবাসনে বাস করেন প্রায় ১৬ শতাংশ ব্রিটিশ-পাকিস্তানি।
ওএনএসের জরিপ অনুসারে, যুক্তরাজ্যে ঘরভাড়া সাত বছরের মধ্যে দ্রুত গতিতে বেড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ কর্মীদের তুলনায় ভারতীয় কর্মচারীদের আয় বেশি, যা প্রায় প্রতি ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ২৯ পাউন্ড। কিন্তু বাংলাদেশিরা ঘণ্টাপ্রতি আয় করেন মাত্র ১১ দশমিক ৯০ পাউন্ড।
ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসন ও মর্টগেজ পরামর্শক, আব্দুল কাদির বলেন, বেশির ভাগ বাংলাদেশি ব্রিটেনে কম বেতনে চাকরি করেন। তাই তাদের ওপর আবাসন সংকটের প্রভাব মারাত্মক। প্রাইভেট রেন্টেড ঘরের ক্ষেত্রে ভাড়া কয়েক গুণ বেশি।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর অহিদ আহমদ বলেন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও কাউন্সিল টেক্সের অব্যাহত বৃদ্ধি জনজীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। আবাসন সংকট মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
বার্তা বিভাগ প্রধান