Home » ব্রিটেনে স্বদেশিদের কাছে প্রতারণার শিকার হাজারো বাংলাদেশি কর্মী

ব্রিটেনে স্বদেশিদের কাছে প্রতারণার শিকার হাজারো বাংলাদেশি কর্মী

ব্রিটে‌নে কেয়ার ভিসায় ক‌য়েক হাজার বাংলা‌দেশি এসে পৌঁছেছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে আসা এসব বাংলাদেশি এখন কাজ না পেয়ে বিপদে পড়েছেন। তাদের সঙ্গে প‌রিক‌ল্পিতভা‌বে প্রতারণার সু‌নি‌র্দিষ্ট অভিযোগ মি‌লে‌ছে কিছু কেয়ার হোম কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশি দালাল‌দের বিরু‌দ্ধে।

জানা গেছে, একেকজন কর্মীর কাছ থে‌কে ২০ থে‌কে ২৫ হাজার পাউন্ড অবৈধভা‌বে হা‌তি‌য়ে নেওয়া হয়েছে। এখন কাজ না থাকায় ভিসা বা‌তিল হ‌চ্ছে তাদের।

এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে কর্মী‌দের সঙ্গে যোগা‌যোগ বন্ধ ক‌রে নি‌জে‌দের বাঁচা‌তে নানা কূটকৌশ‌লের আশ্রয় নি‌চ্ছে দালালরা। হোম অ‌ফি‌সে মিথ্যা তথ্য দি‌য়ে বা‌তিল করা‌নো হ‌চ্ছে কর্মী‌দের ভিসা। তাতে সর্বস্ব হা‌রি‌য়ে বিপ‌দে পড়ে‌ছেন সদ্য আসা ক‌য়েক হাজার বাংলা‌দেশি। দে‌শে ফেরা ছাড়া অন্য কোনও পথ থাকছে না তা‌দের। আর কেয়ার হোম ও কর্মীর সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হি‌সে‌বে যোগা‌যোগ ক‌রে বাংলা‌দেশি দালালরা হা‌তি‌য়ে নি‌চ্ছে লাখ লাখ পাউন্ড।

ভ‌য়েস ফর জা‌স্টিস ইউ‌কের সে‌ক্রেটারি, বাংলা‌দেশি ক‌মিউ‌নি‌টির প্রবীণ নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী ব‌লেন, এই মুহূর্তে কেয়ার ভিসায় আসা অন্তত ২৫ জন ভুক্ত‌ভোগী‌কে সহায়তার চেষ্টা করছি। কেয়ার ভিসায় এ‌ দে‌শে এ‌সে আমাদের নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বাংলা‌দেশি এক তরুণকে তার নি‌য়োগদাতা গাড়ি দি‌য়ে ধাক্কা দি‌য়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠি‌য়ে‌ছে। আমার এক নিকটাত্মীয় ২৪ হাজার পাউন্ড খরচ ক‌রে এ‌ দে‌শে এ‌সে ৯ মা‌সে এক‌দিনের জন্যও কাজ পান‌নি। উ‌ল্টো কেয়ার হোম তা‌কে জব অফার ক‌রার পরও সে কা‌জে যায়নি, এমন মিথ্যা অভিযোগ হোম অ‌ফি‌সে দি‌য়ে তার ভিসা বাতিল ক‌রি‌য়ে‌ছে।

তি‌নি আ‌রও ব‌লেন, কেয়ার ভিসায় বাংলা‌দেশি যারা এ‌সে‌ছেন, তাদের শতকরা ৯০ জনই প্রতা‌রিত হ‌য়ে‌ছেন। আর এই প্রতারণার মূল হোতা বাংলা‌দেশি মধ্যস্বত্ব‌ভোগী দালালরা।

বাংলা‌দেশি দালালরা রাতারা‌তি কো‌টিপ‌তি হ‌য়ে ঢাকায়, দুবাই‌য় বা‌ড়ি, বিলাসবহুল গা‌ড়ি কিন‌ছে। আর তা‌দের প্রতারণার শিকার ক‌য়েক হাজার বাংলা‌দেশি নিঃস্ব হ‌য়ে দিন পার করছেন বলে জানান তিনি।

ব্রিটে‌নে কেয়ার ভিসায় আসা ভুক্ত‌ভোগী অন্তত ১০ জ‌নের সঙ্গে কথা ব‌লে জানা গেছে, এ‌ দে‌শে আসার পর প্রশিক্ষণ সপ্তা‌হের আ‌য়োজন ক‌রেন নি‌য়োগদাতারা। এই ইনডাকশন সপ্তা‌হের শুরু‌তেই সং‌শ্লিষ্ট কর্মী‌র কাছ থে‌কে নি‌য়োগদাতা কোনও ধর‌নের টাকা নেয়‌নি, এই ম‌র্মে হলফনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়। প‌রে যা‌তে ওই কর্মী আদাল‌তে না যে‌তে পা‌রেন‌, সেই আইনি পথ বন্ধ রাখ‌তেই আ‌গেভা‌গেই এই কৌশল নেয় ধুরন্ধর নি‌য়োগদাতারা।

এরপর পাঁচ দিন ইং‌রে‌জি ভাষায় দক্ষতার ট্রেনিং দি‌য়ে নেওয়া হয় অ্যাসেসমেন্ট। আইইএল‌টিএস থাকার পরও ওই অ্যাসেসমেন্টের পর কর্মী‌কে জানা‌নো হয়, কা‌জের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা তার নেই।

নি‌য়োগদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাচ্ছেন না কেয়ার ভিসায় আসা বেশিরভাগ বাংলাদেশি কর্মী
নি‌য়োগদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাচ্ছেন না কেয়ার ভিসায় আসা বেশিরভাগ বাংলাদেশি কর্মী
সু‌হেল আহমদ, মু‌বেদ চৌধুরী, সে‌লিনা আক্তার কলিসহ ক‌য়েকজন ভুক্ত‌ভোগী জানান, ব্রিটে‌নে অ‌নিয়‌মের অ‌ভি‌যো‌গে শতা‌ধিক কেয়ার হোমের বি‌দেশি কর্মী আনার লাই‌সেন্স বা‌তি‌লের পর এখন নিজে‌দের রক্ষায় প্রতারণার পথে হাঁট‌ছে কেয়ার হোমগু‌লো। যে কেয়ার হোমের দশজন কর্মী দরকার তারা শুধু বড় অঙ্কের টাকার লো‌ভে কর্মী এ‌নে‌ছে ৪০ জন। এখন বা‌ড়তি কর্মী‌দের কাজ দি‌তে পার‌ছে না তারা। নানা ধর‌নের ট্রেনিংয়ের নামে সময়ক্ষেপণ কর‌লেও কোম্পানিগু‌লো কাজ দি‌তে না পারায় মান‌বেতর জীবনযাপন কর‌ছেন হাজারো বাংলা‌দেশি কর্মী। বাড়িতে ধারদেনা করে অর্থ জোগান দেওয়া পরিবারের সদস্যরাও আছেন কষ্টে। আবার কোনও কোনও ক্ষে‌ত্রে কোনও ধর‌নের ট্রেনিং‌য়েরও সু‌যোগ দি‌চ্ছে না কোম্পানিগু‌লো।

অপরদি‌কে মাসের পর মাস বেকার থাকা কর্মীরাও কাজের জন্য চাপ দি‌চ্ছেন কেয়ার হোম কর্তৃপ‌ক্ষের সং‌শ্লিষ্ট দালাল‌দের। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে অ‌নেক নিয়োগদাতা সং‌শ্লিষ্ট কর্মী ব্রিটে‌নে আসার পর কোম্পানির সঙ্গে কোনও যোগা‌যোগ ক‌রে‌ননি ব‌লে হোম অ‌ফি‌সে মিথ্যা তথ্য দি‌চ্ছে। এ কার‌ণে হোম অ‌ফিস কর্মীকে কোনও ধর‌নের সময় না দি‌য়ে সরাস‌রি কস (সিওএস) বা‌তিল করছে।

কেয়ার হোমগু‌লোর মিথ্যা ত‌থ্যের কার‌ণে তখন ওই কর্মী ৬০ দি‌নের নো‌টি‌শের সু‌যোগ থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌ন। তখন তার নি‌য়োগদাতা প‌রিবর্তন বা কোনও ধর‌নের আ‌পি‌লের সু‌যোগও থা‌কে না। তখন কর্মী‌ বাধ্য হন খা‌লি হা‌তে দে‌শে ফি‌রে যে‌তে। একই সঙ্গে এদের পরবর্তী ১০ বছ‌রের জন্য ব্রিটে‌নের সব ধর‌নের ভিসা আ‌বেদ‌নের অযোগ্যও কর‌ছে দেশটির সরকার।

এদি‌কে ১১ এ‌প্রিল থে‌কে কেয়ার ভিসায় ডি‌পে‌ন্ডেন্ট আনার পথ সরকার বন্ধ ক‌রে দেওয়ায় প্রতারণার নতুন প‌থে হাঁট‌ছে আদম ব্যবসায়ীরা।

টিয়ার ফাই‌ভের মি‌নিস্টার অব রি‌লি‌জিয়ন না‌মে মস‌জি‌দের ইমাম, মুয়া‌জ্জিন ও মাদ্রাসার শিক্ষক আনার না‌মে ঘট‌ছে প্রতারণা। ইতোমধ্যে বাংলা‌দেশি অধ্যুষিত লন্ড‌নের এক‌টি এলাকায় মস‌জি‌দের না‌মে মস‌জিদ কমিটির অজা‌ন্তে অন্তত ১০ জ‌ন বাংলা‌দেশির সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হ‌য়।

আইনজী‌বীদের পরামর্শ

এই ব্যাপা‌রে লন্ডনের লেক্সপার্ট সলিসিটর্স এলএলপির ম্যানেজিং পার্টনার ব্যারিস্টার শুভাগত দে ব‌লেন, প্রতি‌দিন ভিসা বা‌তি‌লের ও ৬০ দিনের নোটি‌শের চি‌ঠি নি‌য়ে বাংলা‌দেশিরা আস‌ছেন। এখ‌নও যারা আস‌তে চান, তাদের প্রতি অনু‌রোধ জে‌নেবু‌ঝে আসুন।

ইংল্যান্ডে আসার প‌র নি‌য়োগদাতার সঙ্গে যোগাযো‌গের প্রমাণ রাখা, নি‌য়োগদাতা ডি‌বিএস করা‌লে তার ক‌পি, ট্রেনিংয়ের কোনও হ্যান্ডবুক বা পি‌ডিএফ দি‌লে সেসব ক‌পি রাখা ও আসার আ‌গে মূল নি‌য়োগদাতার সঙ্গে সরাস‌রি যোগাযোগ ক‌রে আসার পরামর্শ দেন তি‌নি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *