আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর দিনটিতে উদযাপন হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ বিকাল থেকেই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন।’
“চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিন রোববার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অপরের সঙ্গে।”
দোয়া ও মোনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনার অঙ্গীকারে। ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ (শুক্রবার) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক বৈঠক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।’ চাঁদ দেখা গেলে হয়তো কালই ঈদুল ফিতর, অন্যথা পরশু মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুুল ফিতরের আনন্দে মেতে উঠবে সন্দেহ নেই।
যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, নামাজ, তারাবিহ, ইবাদত-বন্দেগি এবং ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরস্কার হচ্ছে ঈদ। যারা রোগব্যাধি ছাড়াই সুস্থ দেহে সিয়াম সাধনা না করে উদরপূর্তি করেছে এবং রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করেছে, ঈদ আনন্দ উপভোগ করার কোনো অধিকার তাদের নেই।’
পবিত্র কোরআনের বর্ণনা মতে, এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানরা নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি তথা পছন্দের পোশাক পরে, দেহে আতরখুশবু মেখে ঈদগাহে যান তখন ফেরেশতারা তাদের সংবর্ধনা জানান। স্বর্গীয় সব বাণীতে তাদের অভিনন্দিত করা হয়।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবনিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয় ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। পবিত্র রমজানে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ও ফেতরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দবার্তা হয়ে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন।
(এদিকে ঈদের জন্য আজ থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে) অবশ্য শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি ছুটির সঙ্গে এক হয়েছে। রোববার ঈদ হলে ছুটি বাড়বে আর একদিন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।’
“আজ চাঁদ দেখা গেলেই ঘরে উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী তৈরির তোড়জোড় শুরু হবে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এই ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার।”
“রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। সরকারি শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকবে উন্নত মানের খাবার এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হবে উন্নত মানের খাবার। এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।’
“কাপড়চোপড়ের মার্কেট থেকে শুরু করে মসলাপাতির বাজারও জমে উঠেছে। চলছে কেনাকাটার ধুম। নাড়ির টানে মানুষ ছুটছে গ্রামের পানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। ঈদ মানুষকে কাছে টানে। দৃঢ় করে সামাজিক ও সম্প্রীতির বন্ধন।” যুগান্তর