গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এ চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। নিয়ম অনুযায়ী সেখান থেকে আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত শেষে দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং আইনে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একদিন আগে ৮ মে একটি ব্যাংক হিসাব (নম্বর ২১৫১৫০০০০২৫৬৮) খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সাথে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল।
গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও তার একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট ২৭ এপ্রিল হলেও এই অ্যাগ্রিমেন্টে ব্যাংক হিসাব দেখানো হয়—যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়াভাবে তৈরি সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের মিরপুর শাখার হিসাব নম্বর ০৫৬১৩০১০০০০০০০১০ থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখার হিসাব নম্বর ২১৫১৫০০০০২৫৬৮-এ ১০ মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
পরে ২০২২ সালের ২২ জুন অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখার হিসাব নম্বর ২১৫১৫০০০০২৫৬৮ থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নামে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের লোকাল শাখার হিসাব নম্বর ১০১১১০০০৪৭১৭২-এ ১৭ মে ১০ কোটি টাকা, ২৫ মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০ মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ সর্বমোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই অসৎ উদ্দেশ্যে আত্মসাতের অভিপ্রায়ে সিবিএ নেতা কামরুজ্জামানের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের মিরপুর শাখার হিসাব নম্বর ১১৫১৫৭০০৪২৬৮২-তে ২৫ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের, মিরপুর শাখা হিসাব নম্বর ১১৫১৫৭০০৪২৯০৮-এ ২৬ মে ২ কোটি টাকা এবং ২ জুন ১ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাব নম্বর ১১৫১৫৭০০৪২৫৬৫-এ ২৬ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কর্মাশিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাব নম্বর ০৮৮০৫০০১২২৩-এ ৪ কোটি টাকা এবং দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখার হিসাব নম্বর ২৮০১১৮৬৭১৫০০১-এ ৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয় এবং অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী ও অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফের নামে থাকা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান নর্থ শাখা ঢাকার যৌথ হিসাব নম্বর ১৮৫৯৮১৪৭৫০১-এ গত ২৯ মে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের নেতা কামরুল ইসলাম ডাচ-বাংলা ব্যাংকের, লোকাল শাখার হিসাব নম্বর ১০১১১০০০৪৭১৭২ থেকে চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত বাকি ৭২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের, লোকাল শাখার হিসাব নম্বর ১০১১১০০০৪৭১৭২-এ ফ্রিজ করা আছে। সুতরাং অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ওই অর্থ আত্মসাৎ করে অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে আত্মসাৎ করেছেন। দণ্ডবিধি এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় আসামি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান