বাংলা পঞ্জিকায় ‘মাঘ’ হাঁড়কাপানো শীতের মাস। ‘মাঘের শীতে বাঘে পালায়’— এমন প্রবাদও প্রচলিত। তবে সাধারণত জনবহুল রাজধানী শহরে এমন প্রবাদ বইয়ের পাতাতেই পড়তে হয়। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকাল দেখতে যেতে হয় গ্রামেই। এ বছর তা অনেকটাই বদলে গেছে। মাঘ আসার আগে থেকেই তীব্র শীতের প্রকোপ দেখা গেছে রাজধানীতে। আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র শীতের প্রকোপে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষ ও ছিন্নমূলদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। আবহাওয়া অধিদফতর ভাষ্য, রাতে এই তাপমাত্রা কমে আসতে পারে আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ফলে আর দুই ডিগ্রি কমলেই ঢাকাতেও শৈত্যপ্রবাহ শুরুর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজধানীর। গেলো ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আজ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ঢাকায় রাতে তাপমাত্রা আরও এক থেমে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে রাতে। একেবারে শৈত্যপ্রবাহ বইবে, এটি বলা যাচ্ছে না। তবে কনকনে বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা আরও কিছুটা বাড়তে পারে ঢাকায়।
এদিকে ঢাকায় শীতের প্রকোপে সকালের ভোগান্তিতে পড়েন চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। সকালে শীতের মধ্যে স্কুল ড্রেসের উপরে অতিরিক্ত কাপড় পেঁচিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক কম।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী অর্ণব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সে আজ স্কুলে যায়নি। এই শিক্ষার্থী জানায়, শীতের জন্য সকালে স্কুলে যেতে পারিনি। অনেক জেলায় স্কুল বন্ধ দিচ্ছে, ঢাকায় দিচ্ছে না কেন জানি না। বিশেষ করে ছোটদের তো অনেক কষ্ট হচ্ছে।
ভোগান্তিতে পড়েছেন চাকরিজীবীরাও। বিশেষ করে সকালে কাজকর্ম সেড়ে যারা অফিসে যান তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে এই শীত। সকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে মতিঝিলের অফিসে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মালিহা রহমান। তিনি বলেন, ‘বাসায় ঘরের কাজ করতে করতে ঠান্ডা এত বেশি বুঝতে পারিনি। বের হয়েই জমে গেছি। এখন মনে হচ্ছে আরেকটা শাল নিয়ে বের হওয়ার দরকার ছিল।’
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর অনেক জায়গায়। রবিবার দিবাগত রাতে ছবি তুলেছেন- সাজ্জাদ হোসেন)
পল্টনের সরকারি অফিসের চাকরিজীবী পলি সরকার বলেন, ‘কাঁপতে কাঁপতে অফিসে এসেছি। বুঝতেই পারিনি আজ এত বেশি হবে ঠান্ডা। অফিসের দরজা-জানালা সব আটকানো, তাই ঠান্ডা কিছুটা কম। তবে বাইরে যারা কাজ করছেন, তাদের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। আমি তো বের হয়ে বাসায় কীভাবে যাবো, সেটা নিয়েই চিন্তায় আছি।’
পলি সরকারের আশঙ্কার সত্যতা আছে। বাইরে যারা কাজ করেন, বিশেষ করে যারা সিএনজি চালিত অটো রিকশা, রিকশা ও মোটরসাইকেল চালান তাদের পড়তে হয়েছে বেশি ভোগান্তিতে। রিকশাচালক শহিদুল বলেন, ‘রাতে শীতে ঘুমাতেও পারিনি। এখন ভোরে উঠে কাজে বের না হলে পেটেও কিছু পড়বে না। বাধ্য হয়েই কাজে বের হইছি। এখনই হাত পা বরফ হয়ে যাইতেছে। দুপুরের পর মনে হয় আর রিকশায় চালাতে পারমু না।’
ঢাকায় অনেকেই ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। তীব্র শীতে নাকে-মুখে মাফলার পেঁচিয়ে, হাতে মোজা পরে কেউ কেউ মোড়গুলোতে অপেক্ষা করছেন যাত্রীর। তবে ঠান্ডায় মোটরসাইকেলে যাত্রী তেমন একটা উঠছেন না।
এদিকে ফুটপাতে যেসব হকার ছোট-খাটো ব্যবসা করেন, তীব্র শীতে তারাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই দোকানই খোলেননি। কয়েকজন শীত উপেক্ষা করেই পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিশেষ করে শীতের কাপড়ের ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও দেখা গেছে। কথা হয় পল্টন মোড়ের হকার আক্কাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পরিচিত দোকানদারদের অনেকেই আজ ফুটপাতে বসেননি। তবে দোকান না খুললে খাবো কী, পেটের টানে বাধ্য হয়ে বসেছি। শীত বাড়লে বিক্রি বাড়ে, তাই এই শীতেও আমরা বসছি। তবে সারা দিন থাকা যাবে কিনা, বুঝতেছি না।’
তবে মোড়ে মোড়ে সড়ব দেখা গেছে পিঠাপুলি ও চায়ের দোকানগুলোতে। অস্থায়ী পিঠার দোকানের চুলা ঘিরে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেককেই।
সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন ফুটপাতে থাকা ভাসমান মানুষেরা। পল্টনে, মতিঝিলে, প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায়, ফকিরাপুলে এমন অনেক মানুষের দেখা পাওয়া যায়। কেউ কেউ দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান