নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক দফতর বাংলাদেশ সচিবালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে মন্ত্রীর দফতরে সংস্কারের কাজ চলছে পুরোদমে। কাজ চলছে নামফলক পরিবর্তন ও কক্ষ সাজসজ্জার। এ কাজে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারও ব্যস্ত সময় পার করেছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দফতর সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক ছুটির দিন শনিবারও অফিস করেছেন।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকাল অবধি সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রীর দফতর ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে কয়েকটি দফতরে নতুন মন্ত্রীর নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। তবে অনেকগুলোতে আবার আগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামফলক রয়ে গেছে। তবে গত সরকারের যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন এবং দফতর বদল হয়নি, সেসব মন্ত্রণালয়ের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। সেসব মন্ত্রণালয়ে তেমন কোনও আয়োজনও চোখে পড়েনি। এসব মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রবেশপথও বন্ধ দেখা গেছে।
সচিবালয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অর্থমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে দেখা গেলো, সেখানে এখনও ঝুলছে সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নামফলক। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ চললেও দুপুর পর্যন্ত নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নামফলক বসানো হয়নি। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী জানিয়েছেন, নামফলক তৈরি করে আনতে লোক গেছে। তিনি সেটা তৈরি করে নিয়ে এলেই নতুন নামফলক বসানো হবে।
একইভাবে রয়ে গেছে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নামফলকও। সেখানে বসানো হবে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নামফলক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দফতরে কর্মরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘দফতর পরিবর্তনের খুব একটা প্রয়োজন তো নেই। মন্ত্রীর দফতরে নতুন প্রতিমন্ত্রী বসবেন। সেখানে মন্ত্রী টিপু মুনশির নামফলকের স্থলে বসানো হবে প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটুর নামফলক।’ সেটি রবিবার সকালেই করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ সদস্য।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর দফতরের পরিবর্তনের বা নামফলক পরিবর্তনের কোনও কাজ নেই বলে ওই মন্ত্রণালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ দেখা গেছে। একইভাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দফতর ও মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কোনও সাজসজ্জার কাজ চোখে পড়েনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে গিয়েও দেখা যায়, সেখানে ইতোমধ্যেই নতুন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নামফলক বসানো হয়েছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী মোহম্মদ শাহাবউদ্দিনের নামফলক।
একই সঙ্গে বসানো হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বেগম সিমিন হোসেন রিমির নামফলকও। সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার নামফলক। একই মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক সকাল থেকেই নিজে অফিস করছেন এবং এসব কাজের তদারকি করছেন।
আগের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নামফলক খুলে সেখানে স্থাপনের কাজ চলছে একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নামফলক। তবে ডা. দীপু মনির নতুন দফতর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর রুম গোছানোর কাজ চলছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। যদিও মন্ত্রণালয়ের বোর্ডে সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদের নাম রয়ে গেছে। তখন পর্যন্ত নতুন মন্ত্রী ডা. দীপু মনির নাম সেখানে প্রতিস্থান করা হয়নি। তবে মন্ত্রীর কক্ষের বোর্ড থেকে আগের মন্ত্রীর নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
খুলে ফেলা হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নামফলকও। সেখানে স্থাপনের কাজ চলছে নতুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের নামফলক। একইভাবে প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমদের নামফলক সরিয়ে সেখানে স্থাপনের কাজ চলছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নামফলক। নতুন করে সাজানো হচ্ছে মন্ত্রীর কক্ষটিও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরিয়ে ফেলা হয়েছে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামফলক। স্থাপনের কাজ চলছে নতুন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ও নারায়ন চন্দ্র চন্দের নামফলক। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে সাজসজ্জার কাজ চলছে। যদিও তখনও পর্যন্ত মন্ত্রীর দফতরে শোভা পাচ্ছিল সাবেকমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নামফলক। নতুন মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামফলক তখনও পর্যন্ত বসানো হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাল সকালের আগেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে শনিবারই নামফলক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের। স্থাপন করা হয়েছে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের নামফলক। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ১০টায় মন্ত্রণালয়ে যোগদান শেষে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। এরপর সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হবেন এবং মন্ত্রণালয় সম্পর্কে অবহিত হবেন। বেলা ১২টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি নতুন সরকারের দুজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর মধ্যে একজন।
উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছেন। দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির কারণে রবিবার (১৪ জানুয়ারি) তারা প্রথম কর্মদিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে নিজনিজ দফতরে আসবেন এবং অফিস করবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, শপথ নেওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই তারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। তবে তারা নিজ নিজ দফতরে অফিস করবেন রবিবার থেকে।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন
বার্তা বিভাগ প্রধান