ডলার সংগ্রহের নির্ধারিত দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা নমনীয়তার কারণে বিদায়ী ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর পুরো বছর প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষ মাসে ব্যাংকগুলো ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পঞ্জিকা বর্ষে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন দেশে। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার; যদিও ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আর চলতি বছরও বাংলাদেশে একই পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাবে বলে পূর্বাভাস দেয় অর্থ সংস্থাটি।
প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য আরও বলছে, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময় শেষে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকটির হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বরে আসে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আলোচ্য মাসে দিনে গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ৭০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (বিকেবি) মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭২ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
ব্যাংকাররা বলছেন, অনুকূল বিনিময় হারের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। গত মাসে এক ডলারের জন্য ১২২ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো বছরের শেষের দিকে ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় আসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। পরের মাস আগস্টে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ডলার এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে আসে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার এবং ডিসেম্বরে এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড ১২ দশমিক ৪৬ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১১ দশমিক ৩৫ লাখ।
কর্মী রফতানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হলেও বিগত দুই পঞ্জিকা বর্ষে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই আটকে ছিল। ২০২১ সালেও রেমিট্যান্সের প্রবাহ ছিল ২২ বিলিয়ন ডলার।
বার্তা বিভাগ প্রধান