জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা ও একাধিক গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দখলকৃত পশ্চিম তীরে বড়দিন শুরু হয়েছে। সোমবার সকালের এই হামলার আগে অঞ্চলটিতে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এতে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে এবং ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের ঘাড়ে গুলি করা হয়েছে। যেসব শহরে অভিযান ও হামলা হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো বেথেলহেম। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই জেনিনকে। ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই শুরু হওয়ার পর শহরটিতে বারবার হামলা হয়েছে।
জেনিন থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা দশটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। গ্রেফতারের জন্য ফিলিস্তিনিদের খুঁজতে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানায় বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণের জন্য। কিন্তু কেউ তা করেনি। স্থানীয়রা বলেছেন, হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এমন অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলি সেনারা।
আল জাজিরার সাংবাদিক আরও বলেছেন, পশ্চিম তীরে সবচেয়ে বেশি অভিযান চালানো হয়েছে জেনিন শরণার্থী শিবিরে। সেখানে প্রতিরোধ বা জাতীয়তাবাদের যেকোনও প্রতীক ধ্বংস করছে ইসরায়েলি সেনারা।
সোমবার সকালে শুরু হওয়া জেনিনে অভিযান সমাপ্তির খবর পাওয়া গেছে। তবে শহরটির উত্তর-পূর্বের আল-জালামা গ্রাম থেকে ৯ তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নাবলুসের কাছাকাছি এলাকা, জেরিচো, রামাল্লা এবং যিশু খ্রিষ্টের জন্মস্থান বলে খ্রিষ্টানদের কাছে স্বীকৃতি বেথেলহেমে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। নাবলুসের উত্তর-পশ্চিমের গ্রাম বুরকাতে অভিযান চালিয়ে বৃদ্ধসহ অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ১৭ বছরের এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তুবাসের উত্তরে আকাবা শহরে অভিযান পরিচালনার সময় তাজা গুলিবর্ষণ করলে ওই কিশোর আহত হয়। সেখানে আরও এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিম তীরেও সমান্তরালে সহিংসতা ও গ্রেফতারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা গাজায় হামাসকে নির্মূলের জন্য তারা হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিম তীরে হামাসের উপস্থিতি অল্প হলেও সেখানেও তাদের সহিংসতা চলমান রয়েছে। ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৩০৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন
ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান ছাড়াও ইসরায়েলি সেটেলারদের হামলাও বেড়েছে। প্রায় ৭ লাখ ইসরায়েলি সেটেলার পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদিদের জন্য তৈরি বসতিতে অবৈধভাবে বসবাস করছে। এসব বসতির বেশিরভাগ ফিলিস্তিনের বেসরকারি মালিকানাধীন ভূমিতে তৈরি করা হয়েছে।
গত তিন মাসে ইসরায়েলি সেটেলারদের হামলা বেড়েছে। এসব হামলার মধ্যে রয়েছে গুলিবর্ষণ, ছুরিকাঘাত, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, মারধর, অগ্নিসংযোগ এবং বাড়ি, গাড়ি ও কৃষি জমির ক্ষতিসাধন।
জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে, এসব হামলার প্রায় অর্ধেক ঘটনার ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনারা হামলাকারীদের সঙ্গ দিয়েছে বা সহযোগিতা করেছে।
মানবাধিকার সংগঠন, ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেটেলারদের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ না নেওয়ায় ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে।
ডিসেম্বরের শুরুতে বেলজিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো সেটেলার সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
রবিবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের একটি সহযোগিতা তহবিল অনুমোদন করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেথেলহেমে এ বছর বড়দিন উদযাপন বাতিল করা হয়েছে। সাধারণত হাজার হাজার পর্যটক ও তীর্থযাত্রীর উপস্থিতিতে যে ম্যাঞ্জার স্কোয়ার পূর্ণ থাকতো, এবার সেখানে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দখলকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের বাসিন্দা ম্যাডেলিন বলেন, শহরে সুখ, আনন্দ, শিশু ও সান্তা নেই। এ বছর কোনও উদযাপন নেই।
সাধারণত ম্যাঞ্জার স্কয়ারের মধ্যখানে যে বিখ্যাত ক্রিসমাস ট্রি থাকতো, এবার তা নেই। বড়দিন ঘিরে পণ্যের পসরাও নেই। যেখানে নবজাতক যিশুর জন্ম হয়েছিল বলে মনে করা হয় সেই স্থানের পাথরগুলো কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। গাজায় নিহত শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় গির্জার যাজক ইসা থাল্ডজিয়া বিবিসিকে বলেছেন, শহরটি এখন অতীতের ছায়ার মতো হয়ে গেছে।