ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, মেট্রোরেলে হামলার কোনও তথ্য বা আশঙ্কা নেই। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মহিদ উদ্দিন বলেন, স্বপ্নের মেট্রোরেল গত বছর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। তখন থেকে মেট্রোরেলের কার্যক্রম চলে আসছে। এখন মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও সকাল থেকে রাত ১১টা ও উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত চলছে। যেহেতু মেট্রোরেল মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আমাদের পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ নগরে এই মেট্রোরেল জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে। সময় মতো যাতায়াত করে পৌঁছানো যাচ্ছে। সেই মেট্রোরেলকে আমাদের নিরাপদ রাখা প্রয়োজন। আমাদের সকল স্থানে বাংলাদেশ পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা দিচ্ছে। আপনারা জানেন মেট্রোরেল পুলিশের অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এখন একজন ডিআইজি ও তার জনবল রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতর প্রয়োজনীয় বাড়তি জনবল দিয়েছে। কিন্তু শুরু থেকে এর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ডিএমপি। আজকেও ১৩২ জন ডিএমপির পুলিশ সদস্য মেট্রোরেল পুলিশের সঙ্গে মিলে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করলাম। ছোটো-খাটো যা করণীয় আমরা নিরাপত্তার খাতিরে আলোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করবো। এই বিষয়ে সকলে সহযোগিতা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটনের প্রতিটি বাহন, মেট্রোরেলের প্রতিটি অংশের নিরাপত্তায় কাজ করবো।
মেট্রোরেলে নিরাপত্তায় নতুন সংযোজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু সিসিটিভি থাকলেই হয় না। সেটাকে মনিটরিং করতে হয়। নজরদারিতে রাখতে হয়। নজরদারিতে যদি কারও চলাচলে অস্বাভাবিক কিছু যদি পাওয়া যায় সেটিকে দ্রুত নোটিশ করতে হয়। আর এটা করতে প্রত্যেক নিরাপত্তাকর্মীর হাতে ওয়ারলেস সেট থাকতে হয় যা আমরা দেশের বাইরে দেখেছি। আমাদের হ্যান্ডেল ডিটেক্টর থাকবে। লাগেজ স্ক্যানার বসাতে অনুরোধ জানাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ যেন লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে বসাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। সেই সঙ্গে বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ যেন শনাক্ত করতে পারে সেই ধরনের মেশিনও রাখার অনুরোধ করছি। কারণ যোগাযোগের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যত ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় সব নেওয়া উচিৎ। নগরীর সবাইকে ভালো রাখতে ডিএমপির যে প্রাণান্ত চেষ্টা তারই অংশ এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মেট্রোরেলে নাশকতার কোনও ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. মহিদ বলেন, দেখেন নিরাপত্তা এমন এক জিনিস এটি কিন্তু যেকোনও জায়গায় বিবেচনায় রাখতে হবে। নাশকতাকারীরা জানান দিয়ে কোনও অপরাধ করে না। সে জন্যেই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে হামলার কোনও তথ্য বা আশঙ্কা নেই। আমরা প্রতিটি স্থানে প্রতিদিন নিরাপত্তা বাড়াচ্ছি। শুধু মেট্রোরেল না— রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, রাস্তাসহ প্রতিটি স্থানেই আমাদের চেষ্টা থাকে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার। আমার বেশ কিছু অমানবিক কার্যক্রম দেখেছি, সকল বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তা কার্যক্রম চলমান। কারণ আমরা প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি সম্পদ নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট। আমরা একটিও নাশকতা প্রত্যাশা করি না। সকলের সহযোগিতা চাই, সচেতনতা চাই। মেট্রোরেল আমাদের একটি স্বপ্নের স্থাপনা। হাজার হাজার মানুষ সহজে যাতায়াত করছে। ফলে এটার জন্যই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তেজগাঁওয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ চলছে। ভিডিওফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যান্য কাজসহ তদন্ত চলছে। তবে শেষ বলার সময় এখনও আসেনি। আরেকটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট যারা তদন্তে পারদর্শী সবাই কাজ করছে। আপনারা খুব শিগগিরই জানতে পারবেন। কোনও ঘটনা ঘটলে বেশিরভাগই চিহ্নিত করা হয় এবং জড়িতরা গ্রেফতার হয়।
নাশকতাকারীদের উদ্দেশ্যে ডিএমপির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আপনারা নাশকতা বন্ধ করুন। কারণ মানুষের প্রতি এমন নির্মমতার কোনোদিনই জয় হয় না। বরং জয় হয় মানবতা ও শান্তির। সেই স্থানে আপনারা থাকেন যেন আইনের আওতায় না আসতে হয়।