অনলাইন ডেস্ক: টানা দুই দিনের মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার দু’একটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, বমুখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ১০ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে ওইসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষগুলো। একটানা বৃৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসও দেখা দিয়েছে। সোমবার সকাল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসে প্রান হানির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য দফায় দফায় তাগিদ দেয়া হচ্ছে। বন্যা কবলিতদেরকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের কোয়ার্টার খুলে দেয়া হয়েছে। এ টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্র্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত শনিবার দিনগত রাত থেকে মুষুলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেন্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজারের একাংশসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ শতাধিক ঘরবাড়ী রয়েছে। আবার অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বস দেখা দিয়েছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজারের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। এদিকে খাল ও ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামা পৌরসভা, লামা সদর, গজালিয়া, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ১০ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। বন্যার আশংকায় স্থানীয়রা শংকিত হয়ে পড়েছেন। সোমবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল এবং উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তর সমুহ কন্যার আশংকাং মালামাল ও নথিপত্র নিরাপদে সরাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. সেলিম, জাকির হোসেন, পিপলু বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। ঢলের পানি ওঠার সময় ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। এমনকি বড় ধরনের আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিবারের মত এবারও প্রথম বারের মত প্লাবিত হয়েছে।
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক জাপান বড়–য়া জানান, গত দুই দিনের বর্ষণে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়ী ও পরিবারগুলো তাদের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারনে কেউ কেউ আবার ক্ষতির সম্মুখিন হয়। অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
পাহাড়ি ঢলে লামা পৌরসভার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রিত ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। ইতিমধ্যে মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহনের জন্য বলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
লামা লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকাসহ ইউনিয়নগুলোতে মাইকিং করে জনসাধারনকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যনদেরকে বলা হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক