Home » মহাসড়কে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি

মহাসড়কে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি

অনলাইন ডেস্ক:  ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তারা উঁৎপেতে আছে প্রতিটি বাস স্টেশনে। প্রতিদিন নিত্যনতুন কৌশলে সাধারণ যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের
বাস টার্মিনাল ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় ডাব, শরবত, পান, চা ও নানা ধরনের মুখরোচক ভ্রাম্যমাণ খাদ্যের বিক্রেতা সেঁজে এসব খাবারে চেতনাশক ওষুধ মিশ্রণ করে যাত্রীদের খাইয়ে ঘায়েল করছে। এখন রমজান মাস হওয়ায় যাত্রীদের ঘায়েলে ইফতারের সময়কে বেচে নিচ্ছে চক্রটি। বিশেষ করে শাহ আমানত সেতুর উত্তরে (নতুন ব্রিজ) বাস স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ ক্রেতা সেজে চেতনানাশক দ্রব্য মিশ্রিত খাবার নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। টার্গেটকৃত গাড়িতে চক্রের
সদস্যরা আগেই উঠে একাধিক সিটে বসে প্রথমে অন্য যাত্রীদের বিশ্বাস করার জন্য কিছু খাবার ক্রয় করে গ্রæপের সদস্যরা খাই। যেসব খাবারে ওষুধ মিশ্রণ নাই সেসব খাবার নিজেরা খেয়ে অন্যদের খাবারগুলো কিনতে আগ্রহী করে তোলে।
এবার টার্গেটকৃতদের কেউ খাবার চাইলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত খাবার দিয়ে বিক্রেতা গাড়ি থেকে নেমে যায়। এবার যাত্রী ভেসে বসে থাকা অজ্ঞানের সদস্যের পালা। ওই খাবার খেয়ে যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয়। এছাড়া গাড়ির সিটের কাছে ক্লোরোফোম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও যাত্রীদের অজ্ঞান করা হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টেশনগুলোকে বিচরণ ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। গত এক মাসে এই মহাসড়কে বাসে যাতায়াত করতে গিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন। এসব ব্যক্তিদের
সর্বস্ব লুটে নিয়েছে তারা। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া একাধিক ব্যক্তিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানার পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পরে পরিবারের সদস্যদের হাতে জিম্মায় দিয়েছেন। এধরনের একাধিক ঘটনা ঘটলেও ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ করার খবর পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলার ড্রীম হাউজ এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন মোস্তাক আহমদ নামে বান্দরবান বিআরটিসির এক কর্মকর্তা। স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। পরে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে রেফার করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। গত কয়েক সপ্তাহ আগে নিউ অনুপম নামের ট্রান্সপোর্টের মালিক মো. ফরিদুল আলম নতুন ব্রিজ এলাকায় লোকাল বাস হানিফে উঠার পর অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে খুইয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫ শত টাকা ও ৩ টি মোবাইল সেট।

ফরিদ জানান, বাসে উঠার পর একটি ডাব খেয়েছিলাম। সেই ডাবটিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত থাকায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে চক্রটি আমার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। ওইদিন লোহাগাড়ার আমিরাবাদ থেকে স্থানীয়রা অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রায় ৪ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরেছে। একাধিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানুষের সর্বস্ব লুটে নিতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নানা ধরনের বিপজ্জনক ওষুধ ব্যবহার করে। এসব ওষুধ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। তাছাড়া এই ওষুধে আক্রান্ত হলে অনেকের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটাও কঠিন হয়ে যেতে পারে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল, নতুন
ব্রিজ, মইজ্জার টেক, ক্রসিং, শান্তিরহাট, পটিয়া বাসস্টেশন, রওশন হাট, কলেজ গেইট, দোহাজারী, কেরানীহাট, পদুয়া, আমিরাবাদ, চিরিংগা ও ইদগাহ বাজারসহ একাধিক পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব চক্রকে চিহ্নিত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ
(ওসি) মো. রফিকুল হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন আগে একব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ওই লোকটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে । পরে ওই লোকের পরিবারের হাতে জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়। তবে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *