প্রায় চার ঘণ্টা তল্লাশির পর তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে বেরোল সিবিআই। তবে তাঁদের সঙ্গে গাড়িতে উঠলেন দেবরাজও। বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর তথা মেয়র পরিষদের সদস্য দেবরাজ তৃণমূলের বিধায়ক অদিতি মুন্সীর স্বামী। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল সিবিআই। দুপুর ১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের সঙ্গে গাড়িতে উঠতে দেখা যায় দেবরাজকে। কোথায় যাচ্ছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘তল্লাশি শেষ হওয়ার পর যা বলার বলব আমি।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিয়োগ মামলার তদন্তে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সিবিআই। সকালে তৃণমূলের আরও এক কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআই। সেখানে তল্লাশি যখন চলছে তখনই সিবিআইয়ের আরও একটি দল পৌঁছে যায় দেবরাজের বাড়িতে।
সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজারহাটে দেবরাজের বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআইয়ের দলটি। যদিও সেই সময় দেবরাজ বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়ির লোক সিবিআই গোয়েন্দাদের জানিয়ে দেন, দেবরাজ বাড়িতে নেই। যদিও এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ দেবরাজের গাড়ি এসে পৌঁছয় তাঁর বাড়ির সামনে। সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যান। এর পরেই দুপুর ১টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে আবার বাইরে আসতে দেখা যায় সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের। সিবিআই সূত্রে খবর, বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁরই আরও একটি বাড়ির ঠিকানায়। কেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দেবরাজ বলেন, ‘‘কেন এই তল্লাশি অভিযান, তার কিছুই জানি না। সিবিআই এসেছিল। তারা আদালতের নির্দেশ পেয়ে এসেছে। তারা তাদের কাজ করছে। এখন আমাকে আমারই অন্য একটি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। আমার যা বলার আমি তদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই বলব।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযান শুরু হয় পৌনে ৯টা নাগাদ। প্রথমেই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্যের বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআইয়ের একটি দল। এর পরেই বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজের বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআই। এরপর একাদিক্রমে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে এবং কোচবিহারেও সিবিআই গোয়েন্দারা পৌঁছে যান।
প্রসঙ্গত বুধবারই ধর্মতলায় আয়োজিত বিজেপির সভায় বক্তৃতা দিতে উঠে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাংলায় দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের তল্লাশি শুরু হয় শাসক দলের নেতা, কাউন্সিলর, বিধায়কদের বাড়িতে।
২০১৫ সাল থেকে বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজ। তবে সেই সময় তিনি তৃণমূল ছেড়ে সাময়িক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য আবার তৃণমূলেই ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি বিধান নগর পুরসভার মেয়র পরিষদও। রাজনৈতিক মহলে তাঁকে অনেকেই চেনেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে তাঁর আরও একটি পরিচয়ে চেনে বাংলার মানুষ। তিনি কীর্তনশিল্পী অদিতির স্বামী। ২০২১ সালে তৃণমূলের টিকিটে রাজারহাট-গোপালপুর বিধাননগরের টিকিট জিতেছিলেন অদিতি। তার পর থেকে দু’জনেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলার রাজনীতির পরিচিত মুখ।
উল্লেখ্য, এর আগেও একবার দেবরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন সিবিআইয়ের। ২০২২ সালের অক্টেবারে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে হওয়া মামলার তদন্তে তলব করেছিল সিবিআই। দেবরাজ তলব পেয়ে সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন। তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই দেবরাজের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। তবে সিবিআই সূত্রে খবর এই তল্লাশি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে।

নির্বাহী সম্পাদক