মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালেই সেই চিঠি নবান্নে পাঠানো হয়েছে রাজভবনের তরফে। ওই সূত্রেরই দাবি, রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। তার মধ্যে যেমন রাজ্যের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলি রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়ও।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শেষ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য আনন্দ বোস। শীর্ষ আদালতে মামলা চলাকালীন রাজ্যপাল কেন ১২ জন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ৬ অক্টোবরের সেই শুনানিতে বোসকে সাত দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জবাব দিতে বলে নোটিসও জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে ‘অনুরোধ’ করেছিল, রাজ্যপাল যেন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কফির নিমন্ত্রণ’ জানিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেন। ঘটনাচক্রে, তার পর বৃহস্পতিবার রাজভবন সূত্রে খবর পাওয়া গেল, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘রাজ্যপাল আলোচনা চেয়েছেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাব। আমরা বার বার বলেছিলাম। স্বাগত জানাচ্ছি।’’
রাজভবনের ওই সূত্রের দাবি, রাজ্যপাল বর্তমানে কেরলে রয়েছেন। আগামী ১৫-১৬ অক্টোবর তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। তার পরেই আলোচনায় বসার কথা চিঠিতে জানিয়েছেন বোস। প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বরও মধ্যরাতে দু’টি চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যপাল বোস। একটি গিয়েছিল নবান্নে। অন্যটি দিল্লিতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার-রাজ্যপালের সংঘাতের মধ্যেই নবান্নে পাঠানো সেই চিঠি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। যদিও সেই চিঠিতে কী ছিল, তা আর জানা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বা নবান্নের তরফেও সেই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। পরে রাজ্যপাল বোস অবশ্য মন্তব্য করেছিলেন, সেই ‘মিস্ট্রি’ চিঠি এখন ‘হিস্ট্রি’ অর্থাৎ ইতিহাস হয়ে গিয়েছে! সেই রাজ্যপালই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এ বার আলোচনা চাইলেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রাজ্যের ‘বকেয়া’ অর্থ আদায় নিয়ে সম্প্রতি শাসকদল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল বোস। ‘বকেয়া’ নিয়ে দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচির পর শহরে ফিরে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক চেয়ে রাজভবনের অদূরে ধর্নায় বসেছিলেন অভিষেকরা। সেই সময় রাজ্যপাল শহরে ছিলেন না। ধর্নার চতুর্থ দিনে, অর্থাৎ গত রবিবার তিনি রাজভবনে ফেরেন। তার পর সোমবার রাজভবনে অভিষেক নেতৃত্বে তৃণমূলের ৩০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বোসের বৈঠক হয়। তৃণমূলের দাবি, ওই বৈঠকে বোস আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে তুলে ধরবেন। মিনিট কুড়ির সেই বৈঠকের পরেই সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি যান রাজ্যপাল বোস। পরের দিন সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকও করেন। পরে রাজ্যপালের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ও জানিয়েছেন অভিষেক। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালের এই চিঠি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
নির্বাহী সম্পাদক