কৈলাস! স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের বাসস্থান! দুর্গা সপরিবার আসবেন এই বাংলায়। আপনিও ঘুরে আসবেন নাকি শিব ঠাকুরের আপন দেশে? হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন- তিন ধর্মেই অতি পবিত্র স্থান এই কৈলাস। যুগ যুগ ধরে হিমালয়ের কোলে মানস কৈলাস পর্বত এক অভূতপূর্ব রহস্য হয়ে বিরাজ করছে।
হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট দেশ-বিদেশের বহু মানুষ জয় করলেও কৈলাস পর্বত এখনও পর্যন্ত অজেয়। কৈলাস-যাত্রাই তো প্রায় এক মহাযজ্ঞ! কঠিন এক সফর। নেপালের কাঠমান্ডু থেকে যার আরম্ভ।
প্রথম দিন – কাঠমান্ডুতে পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে কৈলাস যাত্রার চূড়ান্ত মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলুন। রাত্রিবাস কাঠমান্ডুতে।
দ্বিতীয় দিন – কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে সফর শুরু। দুটো জায়গায় গাড়ি থামানোর (হল্ট) সুযোগ আছে। একটা ধুনচে, ৬ ঘণ্টার পথ। অন্যটা স্যায়েব্রুবেসি, সাড়ে চার ঘণ্টার পথ। দুটোর মধ্যে যে কোনও একটা জায়গায় এদিনের রাত্রিবাস।
তৃতীয় দিন – রাসুয়াগাধির উদ্দেশে রওনা। ধুনচে থেকে গেলে দূরত্ব ১৫ কিমি। এই রাসুয়াগাধিতেই ইমিগ্রেশন, কাস্টমসের কাজ মিটিয়ে কেরুঙের উদ্দেশে রওনা হতে হবে। কেরুং ১০৫ কিমি পথ, প্রায় ৩ ঘণ্টার রাস্তা। রাত্রিবাস কেরুঙে।
চতুর্থ দিন – সকাল ৯টায় ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ুন সাগার উদ্দেশে। প্রায় ১০০ কিমি পথ, ৫ ঘণ্টার রাস্তা। রাত্রিবাস সাগাতে।
পঞ্চম দিন – সকাল ৮টায় ব্রেকফাস্ট সেরে মানস সরোবরের উদ্দেশে রওনা। ৪৫০ কিমি রাস্তা, প্রায় ৮ ঘণ্টার সফর। এখানে পৌঁছে মানস সরোবর পরিক্রমা করুন। তার জন্য অন্য গাড়িতে উঠতে হবে। রাত্রিবাস মানস সরোবর সংলগ্ন এলাকায়।
ষষ্ঠ দিন – সকালে মানস সরোবরে স্নান সেরে, পুজো দিয়ে, বিকেলে যাত্রা শুরু করুন দারচেনের উদ্দেশে, ২ ঘণ্টার পথ। রাত্রিবাসও দারচেনে।
সপ্তম দিন – সকালে একটু ভারী ব্রেকফাস্ট সেরে যাত্রা শুরু, গন্তব্য তারবোচ। সেখান থেকে যাওয়া যমদুয়ার। কোরা এলাকা সফরের এটি প্রথম পয়েন্ট। চাইলে এখান থেকেও ট্রেক করতে পারেন, দিরাপুক ১২ কিমি রাস্তা, প্রায় ৫-৬ ঘণ্টার। এখানেই উত্তরমুখী কৈলাস পর্বতের চরণ ছুঁতে পারবেন। রাত্রিবাস দিরাপুকে। অনেকেই কৈলাস পরিক্রমা করেন। কিন্তু খুব কম লোক জানেন এবং যান এই চরণপর্বে। এটি মানস কৈলাস পরিক্রমার একটি সংযুক্ত অংশ, যা অনেকে এড়িয়ে যান। তবে যাঁরা কৈলাস পরিক্রমা করবেন না, তাঁরা ফিরে যেতে পারেন দারচেনে, এবং দলের অন্য সদস্যদের অপেক্ষা করে বিশ্রাম নিতে পারেন।
অষ্টম দিন – কোরা সফরের দ্বিতীয় দিন, দিরাপুক থেকে দোলমা পাস হয়ে জুথুলপুকের উদ্দেশে হাঁটা পথে রওনা। ২২ কিমি পথ, প্রায় ৮ ঘণ্টার যাত্রা। এই সফরের সবচেয়ে কঠিন পথ এটি। রাত্রিবাস জুথুলপুকে।
নবম দিন – ২ ঘণ্টার ছোট্ট ট্রেক করে পৌঁছন সাগাতে। এখানে থাকছে আপনার গাড়ি। ফিরে যান দারচেনে। সেখান থেকে আবার সাগার উদ্দেশে রওনা। রাত্রিবাস সাগাতে। দশম দিন – এ দিনের গন্তব্য কেরুং। রাত্রিবাস কেরুঙে।
একাদশ দিন – এ বার ফেরা কাঠমান্ডুর উদ্দেশে, রাসুয়াগাধি হয়ে। সেখানে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস মিটিয়ে নিন। কাঠমান্ডুতে রাত্রিবাস। দ্বাদশ দিন – কাঠমান্ডু থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা।
কিছু জরুরি পরামর্শ – ১) কাঠমান্ডু ছাড়া বেশির ভাগ জায়গাতেই অস্থায়ী টেন্ট লজ, বা সাধারণ মানের হোটেল। মানস কৈলাস-সহ গোটা পরিক্রমার পথে যে সব জায়গায় রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে, সেখানে থ্রি স্টার হোটেল পাবেন, এমনটা আশা করবেন না একেবারেই। ভাল করে হাতে অতিরিক্ত সময় নিয়ে থাকার ব্যবস্থার খোঁজ নিয়ে তবেই যাওয়া ভাল। ২) মানস কৈলাস সফর বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। বাড়তি খরচ মানেই আরামের যাবতীয় আয়োজন আছে, এমন ভাবনা রাখবেন না। স্থানীয়দের সঙ্গে এমন কোনও আচরণ করবেন না, যাতে তাঁরা বিরক্ত হন। ৩) কেন্দ্রীয় সরকার কৈলাস ভ্রমণের আয়োজন করে। পাশাপাশি নেপালেও বেশ কিছু ট্যুর এজেন্সি আছে। তাদের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়ে ট্যুর পরিকল্পনা সারতে পারেন।
৪) মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরে এই ট্যুরের আয়োজন করা হয়। হাতে অনেকটা সময় নিয়ে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি জরুরি। ৫) মানস কৈলাস যাত্রা কষ্টকর ও দুর্গম পথ, কিছু অংশ ট্রেক করতে হয়। তাই যাওয়ার বেশ আগে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যোগাভ্যাস ট্রেনারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। এ ছাড়াও, নেপালের এজেন্সি মারফত এই ট্যুরে গেলে, সঙ্গে দক্ষ গাইড থাকে। তাঁদের উপরে ভরসা রাখুন। ৬) কলকাতা থেকে কোনও এজেন্সি মারফত গেলে দক্ষ গাইড সঙ্গে থাকছে কি না দেখে নিন। কারণ, নেপালের ট্যুর এজেন্সির গাইড সাধারণত সর্বোচ্চ ৫০ জনকে নিয়ে যায়। সেখানে আপনি বা আপনার ছোট দলকে আলাদা ভাবে যত্ন দেওয়ার সুযোগ কম।
৭) পরিকল্পিত ট্যুর প্ল্যানকে নিজের ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বা গ্রুপের অন্য সদস্যদের প্রভাবিত করলে অহেতুক সমস্যা তৈরি হবে। দলের কেউ এমন করছে দেখলেও তাঁকে নিরস্ত করুন। তা হলে? মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিন! এই সফরে যাওয়ার বয়সসীমা ৭০ বছর। তার কমবয়সী এবং শারীরিক সক্ষমতা যথাযথ থাকলে বেরিয়ে পড়লেই হল! এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
নির্বাহী সম্পাদক