Home » ভূমিদস্যু কর্তৃক পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে পুত্রকে বঞ্চিত করার অভিযোগ

ভূমিদস্যু কর্তৃক পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে পুত্রকে বঞ্চিত করার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রংপুরে ভূমিদস্যু ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি থেকে পুত্রকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ভূমিদস্যু ও দখলবাজরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই জমি জবরদখল করে রেখেছেন। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি ফিরে পেতে প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভূক্তভোগী।

অভিযোগে জানা যায়, রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর পূবালী ব্যাংক ভবন সংলগ্ন ১৫ শতক জমির সি.এস রেকর্ডীয় মালিক রেবতী মোহন বড়াল। তিনি ১৯৫১ সালের ৮ জানুয়ারী ৩৭৮নং সাব কবলা দলিল মূলে জনৈক ময়েজ উদ্দিন বরাবর হস্তান্তর করেন। ময়েজ উদ্দিন খাজনাদি পরিশোধে ভোগদখলে থাকা অবস্থায় ১৯৫৬ সালের ১৭ অক্টোবর ২৭৪১৪নং সাব-কবলা দলিল মূলে জনৈক মোহাম্মদ দানিশের নিকট হস্তান্তর করেন। তিনি নিজ নামে খারিজ করিয়া খাজনাদি পরিশোধ পূর্বক ভোগদখলে থাকা অবস্থায় তার নিজ নামে এস.এ রেকর্ডভুক্ত করেন। দলিল মূলে প্রাপ্ত সম্পত্তি ও এস.এ রেকর্ডীয় মালিক মোহাম্মদ দানিশ ১৯৬৯ সালের ২৩ জুন ৩০০০৬নং দলিল মূলে মরহুম শামসুদ্দিন আহমেদের নিকট হস্তান্তর করেন। শামসুদ্দিন আহমেদ ওই জমি নিজ নামজারী করিয়া খাজনাদি পরিশোধ পূর্বক ভোগদখলে থাকা অবস্থায় কুড়িগ্রামের হাফেজ উদ্দিন আহমেদের পুত্র আবু তোরাবের নালিশী সম্পত্তি নিয়ে রংপুর সদর সাব-জজ আদালতে শামসুদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ দানিশকে বিবাদী করিয়া একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নম্বর- অন্য ৫৪/৭০। ওই মামলায় ১৯৮১ সালের ৩১ মার্চ শামসুদ্দিন আহমেদ রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হন। আবু তোরাবের বায়নাপত্রে ভাড়াটিয়া কাজী মাজিরুল ইসলামের পিতা কাজী মফিজ উদ্দিন স্বাক্ষী হিসেবে ছিলেন। উল্লেখ্য যে, শামসুদ্দিন আহমেদের সাব-কবলা দলিলে ০২ (দুই) জন ভাড়াটিয়ার নাম উল্লেখ রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আব্দুল খালেক ও অপরজন কাজী মফিজ উদ্দিন। শামসুদ্দিন আহমেদ ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেক ও কাজী মফিজ উদ্দিনের নিকট ভাড়া চাইলে তারা বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। পরবর্তীতে শামসুদ্দিন আহমেদ রংপুরের ত’ৎকালীন মার্শাল ‘ল’ কোর্টে ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেক ও কাজী মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেক ও কাজী মফিজ উদ্দিন  মার্শাল ‘ল’ কোর্টে শুনানী অন্তে ১৯৮৩ সালের ১২ জানুয়ারী পৃথক পৃথক অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ থাকে যে, আব্দুল খালেক ও কাজী মফিজ উদ্দিন আগামী ১৯৮৩ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে তাদের সমস্ত অস্থাবর মালামাল নিয়ে ওই বাড়ি খালি করে চলে যাবেন। পরবর্তীতে মার্শাল ‘ল’ কোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শামসুদ্দিন আহমেদ ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মাননীয় জজ আদালতে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। মামলায় শামসুদ্দিন আহমেদ ১২ (বারো) শতক জমির রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেক মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলেও তা খারিজ হয়ে যায় এ্বং ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেককে উচ্ছেদ করে আদালত শামসুদ্দিন আহমেদকে দখল বুঝাইয়া দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটনের পিতা ভাড়াটিয়া কাজী মফিজ উদ্দিন ০৩ (তিন) শতক জমিসহ আরো কিছু জমি জোরপূর্বক অবৈধভাবে ভোগদখল করে রেখেছেন। শামসুদ্দিন আহমেদ ১৯৯৫ সালের ৭ মে তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম বরাবর ১৫ (পনের) শতক সমূদয় সম্পত্তি হস্তান্তর করেন। নুরজাহান বেগম নিজ নামজারী করতঃ খাজনাদি পরিশোধ করিয়া নতুন মাঠ (আর.এস-৯২) রেকর্ড নিজ নামে রেকর্ডভুক্ত করেছেন। এদিকে রেকর্ডের বিরুদ্ধে কাজী মফিজ উদ্দিনের পুত্র কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন আপত্তি দাখিল করিলেও সেটেলমেন্টে তাদের আবেদন খারিজ করিয়া দেয় এবং নুরজাহান বেগমের রেকর্ড বহাল রাখেন। নুরজাহান বেগম ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল ৬১০৪নং হেবানামা ঘোষণাপত্র মূলে তার সন্তান মোঃ নাজমুল করিম ডলারের বরাবর ওই সম্পত্তি হস্তান্তর করেন। এরপর  মোঃ নাজমুল করিম ডলার তার নিজ নামে খারিজ করে খাজনাদি পরিশোধ করেছেন। তিনি ১৪৩০ সালের খাজনাও অনলাইনে পরিশোধ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, কাজী মফিজ উদ্দিনের কোন দলিল, রেকর্ড, খারিজ বা খাজনার কোন কাগজপত্রাদি নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ওই জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। জমির মূল মালিক মোঃ নাজমুল করিম ডলার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ওই জমিতে নির্মিত বাড়ি খালি করিয়া দিতে বললে মৃত. কাজী মফিজ উদ্দিনের পুত্র কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন বারংবার মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে আসছে। ওই সম্পত্তি নিয়ে কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য দলের সিনিয়র নেতা ও কাউন্সিলের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী মোঃ নাজমুল করিম ডলার বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাকে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি থেকে বি ত করা হচ্ছে। লিটনের দাবিকৃত মোটা অংকের চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার নিজস্ব লোকজনদের দিয়ে লুটপাট চালিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও কাউন্সিলরের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এটি কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। তিনি আরও বলেন, ভূমিদস্যু ও দখলবাজদের হাত থেকে বাংলাদেশের অসহায়-সাধারণ জনগণকে তাদের নিজস্ব সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি’র একান্ত প্রচেষ্টায় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সকলের সহযোগিতায় বর্তমান সরকার সংসদে একটি আইন পাস করেছেন ‘‘দলিল যার জমি তার”। দখলবাজ ও ভূমিদস্যুদের দখল থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য রংপুরের প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *