অনলাইন ডেস্ক : সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য, দুটি ঘটনাতেই ঘটনাস্থল থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও দিনাজপুরে অস্ত্র, মাদকদ্রব্যসহ গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।’
অভিযান চলাকালে গত ২৪ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে ১৩৬ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭২ জন এবং র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ, এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৬। বাকি ৩০ জন মাদক ব্যবসায়ী দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে সমাজবিরোধী উপাদান থেকে মুক্ত করতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। বুধবার নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে আইনজীবীদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যত দিন না মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আসবে, তত দিন পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। এটি নিয়মিত অভিযান। মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত থাকবে।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শামীম হোসেন (৪২) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বরী বন্দর গ্রামের চেকপোস্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।“
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নিহত শামীম হোসেনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ভবানন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আবদুস সাত্তার।”
প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুলিশ দাবি করেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বরী বন্দর গ্রামের চেকপোস্ট থেকে জগদল সড়কে একদল মাদক ব্যবসায়ী মাদকদ্রব্য লেনদেন করছেন বলে পুলিশের কাছে খবর আসে। খবর পেয়ে রানীশংকৈল থানার পুলিশ রাত দেড়টার দিকে সেখানে অভিযান চালায়। সে সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তখন পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট গোলাগুলির পর মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শামীম হোসেনকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩৪০টি ইয়াবা বড়ি ও দুইটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।”
এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।”
রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান জানান, শামীম হোসেন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে আটটি মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে।”
রংপুর: রংপুর শহরের কুকরুল আমেরতল তিন রাস্তার মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবু মুসা ওরফে ‘বিষ কালাই’ (২৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্য, নিহত ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।”
সাইফুর রহমানের ভাষ্য, আবু মুসা আমেরতল তিন রাস্তার মোড় এলাকায় দলবল নিয়ে অবস্থান করছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে শহরের কুকরুল আমেরতল তিন রাস্তার মোড় এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, ৫০ পিস ইয়াবা ও ৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।”
পুলিশের দাবি, দলবল নিয়ে আবু মুসা আমেরতল তিন রাস্তার মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন জেনে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পালানোর সময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে নিহত হন আবু মুসা।”
আবু মুসার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মাদক, ছিনতাই ও অস্ত্রসংক্রান্ত ১০টি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি শহরের হনুমানতলায়। তিনি কুদ্দুস আলীর ছেলে।”
স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ব্যবসা করতেন আবু মুসা। তিনি মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর এলাকায় পরিচিত ছিল ‘বিষ কালাই’ নামে । কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।’
দিনাজপুর: দিনাজপুরে অস্ত্র, মাদকদ্রব্যসহ গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার ভোররাতে সদর উপজেলার উথরাইল ইউনিয়নের খাড়িপাড়া থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।”
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেদওয়ানুর রহিম বলেন, ভোররাতে খাড়িপাড়া এলাকায় গোলাগুলি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ‘পরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ১০০ বোতল ফেনসিডিল, একটি শুটার গান ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।”