ঠাকুরগাঁও:
মোটর গাড়ি কিংবা হেলিকপ্টারে নয়, এবার বাবার ইচ্ছা পূরণে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য গরু ও মহিষের গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে গেলেন নীরব নামে এক যুবক।
আর এ বিয়ে দেখতে ভিড় জমায় শত শত নারী-পুরুষ।
শুক্রবার বিকেলে এমনই এক ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন করা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে।
নীরব ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খামার নারায়ণপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে।
নিরবের (সাব্বির) সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামে মেয়ে ইসরাত জাহান এশা আকতারের।
গতকাল শুক্রবার ছিল তাদের বিয়ের দিন। নিরবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে বরবেশে গরুর গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যাবে। বউ মাও আসবে গরু গাড়িতে। বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে বর বেশে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যান নীরব। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া টাপুরযুক্ত গরু-মহিষের গাড়ি দেখতে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমান বর ও কনের বাড়িতে। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে গরু-মহিষের গাড়িতে বর যাত্রী যাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করেন। এসময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন অনেকেই। এমন আয়োজনে খুশি বর কনের পরিবারসহ এলাকাবাসী। গ্রাম বাংলার এ পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগ্রহও প্রকাশ করেন অনেকে।
বরের বাবা কুদ্দুস বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল, ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী যাবে গরুর গাড়িতে। এ সময় গরুর গাড়ি পাওয়া দুষ্কর। তাই মহিষের ৯ টি এবং গরুর একটি গাড়ির আয়োজন করি ছেলের বিয়েতে। ছেলেও মেনে নিয়ে গরুর গাড়িতে করেই বিয়ে করতে যায়।
কনের চাচা জয়নাল বলেন, এটা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য। এ রকম আয়োজনে অমরা খুশি।
নারায়ণপুর গ্রামে আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাবার কাছে শুনেছেন- তার দাদার বিয়েতে বরযাত্রী ও বর গরুর গাড়িতে করেছিল। এর পর আর গরুর গাড়িতে কোনো বর যাত্রার অনুষ্ঠান এলাকায় হয়নি। দেখে ভাল লেগেছে।
মহিষের গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে বসা এক বৃদ্ধ জানান, ৪০ বছর আগে এভাবেই এক প্রতিবেশীর বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর এমন আয়নজনে তিনি খুশি।
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল জানান, আবহমান বাংলা গ্রামীন ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে গরুর গাড়িতে বর যাত্রাসহ প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতির কিছু কিছু আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সব গ্রামীন লোকজ ঐতিহ্যগুলো ধারণ ও লালন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক