পদ্মার ওই পাড়ের বাসিন্দা মাত্রই জানেন খরস্রোতা নদীটির চরিত্র। কখনো সে শান্ত, কখনো সে প্রবল স্রোতে উত্তাল। আকাশে মেঘ দেখে বাড়ি থেকে বের হওয়ার কথা ভাবতে হয়। নদীর ভাব দেখে যাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেন বাহন স্পিডবোট, লঞ্চ নাকি ফেরি হবে। এই পথ পারাপারের অভিজ্ঞতা থাকা যাত্রীই শুধু জানেন এর ঝক্কি ও ঝুঁকি কতটা। আজ থেকে এ সবই অতীত। মাত্রই দুয়ার খুললো। স্বপ্নের, সক্ষমতার সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ দুপুর ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশের পর মাওয়া প্রান্তে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর এর মাধ্যমেই খুলে গেল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অপরাপর অংশের জন্য সংযোগ, যোগাযোগ ও সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার।
শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১২টার দিকে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সড়কপথের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে টোলপ্লাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেন।
আজ সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সেতুর দুই প্রান্তে শুরু হয়েছে উৎসব। বড় সমাবেশটি হতে যাচ্ছে মাদারীপুরের শিবচেরর কাঁঠালবাড়ীতে। কিন্তু এর আগেই সেখানে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে ভোর থেকে।
বেলা ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ার সুধী সমাবেশে এসে পৌঁছান। শুরু হয় সভায়। তিনি ছিলেন এ সমাবেশের প্রধান অতিথি। সমাবেশের সভাপতি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাঁর বক্তব্যের পরই তুমুল হর্ষধ্বনীর মাধ্যমে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুরুতেই দেশের মানুষের প্রতি তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। এ সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের একেকটি স্তম্ভ।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন , কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না। কেউ দাবায় রাখতে পারে নি।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাবাস বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে–পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা আমাদের মাথা না নোয়াতে শিখিয়েছিলেন। আমরা মাথা নোয়াইনি। মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে জীবনের জয়গান গেয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের শক্তিই বড় শক্তি, তাদের শক্তি নিয়েই আমি কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ শেষ করেছি।
শেখ হা্সিনা বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। বারবার আঘাত এসেছে। কিন্তু বাঙালি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ভাষনের পর তিনি সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেটের উন্মোচন করেন।