দুবাই থেকে দেশে ফিরতে গত ১৭ ডিসেম্বর হিমালয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে উঠেছিলেন বগুড়ার মো. আবু জিহাদ। নেপালের বেসরকারি বিমান সংস্থা হিমালয় এয়ারলাইন্স বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ট্রানজিট হয়ে বাংলাদেশে যাত্রী নিয়ে আসে। দুবাই থেকে নেপাল আসার পর ট্রানজিট শেষে ফের ঢাকাগামী হিমালয়ের ফ্লাইটে উঠতে গেলে আবু জিহাদকে আটক করে নেপালের কাস্টমস কর্মকর্তারা। শুধু আবু জিহাদ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে হিমালয় এয়ারলাইন্সে ভ্রমণকারী কমপক্ষে ৮ বাংলাদেশি এখন নেপালের কারাগারে বন্দি।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে নেপালের হিমালয় এয়ারলাইন্স। শুরুতে শুধু ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে যাত্রী পরিবহন করলেও ধীরে ধীরে ফ্লাইটের পরিধি বাড়ায় তারা। আবুধাবি, দোহা, দুবাই, দাম্মাম, রিয়াদ, মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে এয়ারলাইন্সটি। সম্প্রতি সরাসরি ফ্লাইটের টিকিট না পেয়ে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই হিমালয় এয়ারলাইন্সে নেপালে ট্রানজিট হয়ে বাংলাদেশ আসছেন।
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে হিমালয় এয়ারলাইন্সে ভ্রমণকারীদের অনেকেই নেপালে আটক হয়েছেন। তবে কমপক্ষে ৮ আটক বাংলাদেশির তথ্য হাতে এসেছে। তারা হলেন—মো. ইউনুস আলী (পাসপোর্ট নাম্বার BQ 0393288), মো. আবু জিহাদ (BT0212154), আশরাফুল ইসলাম (BN 0987871), সালমান আহমেদ (EF 0394741), জাহিদুল ইসলাম (A00100885), সোবহান তালুকদার (BT 0693599), তাওহিদুল তানভীর (A01241469), মো. মিরাজুল ইসলাম (OC 6009083)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নেপালে আটক হওয়া বাংলাদেশিরা ঢাকায় প্রবেশে বৈধ এমন পরিমাণ স্বর্ণ সঙ্গে নিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত সোনার বার আনা যায়। এছাড়া সোনার অলংকার ১০০ গ্রাম পর্যন্ত শুল্কমুক্ত। বিভিন্ন দেশ ট্রানজিট হয়ে এই পরিমাণ সোনা পরিবহনে কখনও জটিলতায় পড়তে হয়নি কোনও বাংলাদেশি যাত্রীকে। তবে নেপালে নিয়ম ভিন্ন, দেশটিতে ৫০ গ্রামের বেশি সোনা আনায় যায় না, ট্রানজিট যাত্রীদের তল্লাশি করে আটক করা হয়। হিমালয় এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি যাত্রীরা নেপালে প্রবেশ না করলেও এ বিধানের আওতায় বিমানবন্দরেই তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় কাস্টমস কর্মকর্তারা।
এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনও যাত্রী যে দেশে যাবেন সেই দেশের নিয়ম অনুসরণ করবেন, ট্রানজিটে ওই দেশের কোনও বিধান তার জন্য প্রযোজ্য নয়, কারণ যাত্রী তো ওই দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছেন না। তাছাড়া, কোনও দেশে যদি ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য কোনও বিশেষ বিধান থাকে তাহলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এ বিষয়ে যাত্রীকে অবহিত করা।
যাত্রীরা অভিযোগ করছেন—নেপালে সোনা পরিবহনের বিধি-নিষেধের বিষয়ে কোনও আগাম তথ্য জানায়নি হিমালয় এয়ারলাইন্সর। এমন কি নেপালে আটক হওয়ার পর তাদের মুক্তির বিষয়েও কোন ধরণের সহযোগিতা করছে না।
নেপালে আটক সালমান আহমেদের বাবা আব্দুল মতিন বলেন, আমার ছেলে তো কোনও দোষ করেনি, তাকে কেনও জেলে আটকে রাখছে। হিমালয় এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে সে আজকে অপরাধী। অন্য এয়ারলাইন্সে আসলে আজকে আমরা ছেলে আমার কাছেই থাকতো। সরকার যেন আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে, আমি সেই দাবি জানাই। বাংলাদেশে এই রকম এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।
১৭ ডিসেম্বর আটক হওয়া আবু জিহাদকে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেপালের কাস্টমস অফিসে আনা হয়। আবু জিহাদ বলেন, আমাদের যদি আগে থেকে হিমালয় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানাতো তবে আমরা তাদের ফ্লাইটে দেশে আসতাম না। আমরা তো তাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছি না তাহলে কেনও আমাদের আটক করবে। জেলে একটা রুমের মধ্যে ৪০-৫০ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। নেপালের বন্দিরা আমাদের মারধর করছে। শুধু হিমালয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ওঠার কারণে আমরা আজকে জেলে। তাদের কারণে নির্মম সময় পার করছি আমরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে কর্মরত হিমালয় এয়ারলাইন্সের কোনও কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশে হিমালয় এয়ারলাইন্সের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) প্রতিষ্ঠান এসএয়ার এয়ার বিডি লিমিটেডের পক্ষে থেকেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশিদের আটক হওয়ার বিষয়টি গোপন করেছে হিমালয় এয়ারলাইন্স। আটক হওয়া যাত্রীদের তথ্য বাংলাদেশ দূতাবাসে জানায়নি হিমালয় এয়ারলাইন্স। এমন কি আটক হওয়া যাত্রীদের পরিবারকেও কোনও তথ্য জানায়নি এয়ারলাইন্সটি।
নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী বলেন, হিমালয় এয়ারলাইন্সের কতজন যাত্রী আটক হয়েছেন সে তথ্য নেপাল সরকার এখনও আমাদের অবহিত করেনি। তবে যাদের তথ্য পেয়েছি, তাদের মুক্তির জন্য আমরা নেপাল সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন