Home » সিলেট চেম্বার নির্বাচন নিয়ে মধ্যরাতে মিছিল ও শোডাউন

সিলেট চেম্বার নির্বাচন নিয়ে মধ্যরাতে মিছিল ও শোডাউন

দিনভর উত্তেজনা ও বেশ নাটকীয়তা শেষে সোমবার রাত ১০টার দিকে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসপতি নির্বাচিত করা হয়েছে মর্মে একটি ঘোষণা দেয় ইলেকশন কমিশন। তবে সেটি মেনে নেননি সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের পরিচালকরা।

এ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন আহমদের প্রার্থিতা বাতিলকে কেন্দ্র করে এ পক্ষ রাত ১১টার দিকে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে চেম্বার এলাকা ত্যাগ করেন।

তবে রাত সোয়া ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল বলেন- প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে চেম্বারের সভাপতি হিসেবে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদকে নির্বাচিত করা হয়েছে। আর সিনিয়র সভাপতি হিসেবে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ ও সহসভাপতি হিসেবে একই প্যানেলের মো. আতিক হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে, চেম্বারের সভাপতি-সহসভাপতি নির্বাচিত করার বিষয়টি সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। লিখিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, ‘‘দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০২২ ও ২০২৩ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত পরিচালকগণের মধ্য হতে নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সকল পরিচালকগণের উপস্থিতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রক্রিয়া শুরুর প্রারম্ভেই সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ হতে নির্বাচিত পরিচালক তাহমিন আহমদসহ ১১ জন পরিচালক এই মর্মে এক লিখিত আপত্তি উত্থাপন করেন যে, যেহেতু দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সংঘবিধিতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী হতে উক্ত তিন পদে নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে, তাই তাদের প্রতিপক্ষ সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ অর্ডিনারী শ্রেণী হতে ২ জন প্রার্থীর মনােনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিধায় প্রার্থিতা দাখিলকারী উক্ত ২ জন প্রার্থীর মনােনয়নপত্র বাতিল করা আবশ্যক।

তাহমিন আহমদ তার এমন আপত্তির স্বপক্ষে একজন আইনজীবীর আইনগত অভিমতও সংযুক্ত করে দেন। সেই আইনজীবী উল্লেখ করেন, দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সংঘবিধির ১২ (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রত্যেককেই ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী থেকে নির্বাচিত পরিচালক হতে হবে। অর্থাৎ ৪টি শ্রেণীর যেকোন ৩টি শ্রেণী হতে প্রেসিডেন্ট, অন্য শ্রেণী হতে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অপর শ্রেণী হতে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবেন। তবে উপরােক্ত ৪টি শ্রেণীর মধ্য হতে যে কোন শ্রেণী হতে যদি কোন প্রার্থী না থাকেন, তবে অন্য শ্রেণী হতে ঐ পদে প্রার্থী হতে পারবেন।

তাহমিন আহমদের আপত্তির প্রেক্ষিতে দেখা যায়, নির্বাচিত সকল পরিচালকই সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের ব্যানারেই নির্বাচনী বাের্ড বরাবরে মনােনয়নপত্র দাখিল করেছেন। একইভাবে নির্বাচনের সময়ও প্রার্থীগণ এই দুই প্যানেলের প্রার্থী হিসাবেই প্রচারণা চালিয়েছেন। সংঘবিধির ১২ (বি) অনুচ্ছেদে প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী হতে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ উক্ত ৩ পদের জন্য ৩টি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী হতে নির্বাচিত প্ৰাথা করেছেন এবং যথারীতি তাদের মনােনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অপরদিকে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ২টি শ্রেণী হতে নির্বাচিত হয়ে উক্ত ৩টি পদে মনােনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ হতে নির্বাচিত অর্ডিনারী প্রার্থী মােঃ আব্দুর রহমান (জামিল) ও হুমায়ুন আহমদ যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে করেছেন। সংঘবিধিতে উক্ত ২ পদে ২টি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী হতে নির্বাচিত পরিচালকদের প্রার্থী হওয়ার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
ব্যবসায়ী পরিষদ হতে একই শ্রেণী হতে এভাবে ২টি পদে ২ জন প্রার্থী হওয়ায় প্রেসিডিয়াম নির্বাচনে আইনগত জটিলতা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং সংঘবিধির বর্ণিত বিধানের সুস্পষ্ট লংঘন হয়েছে। এ অবস্থায় সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের বর্ণিত ২ জন প্রার্থী একই শ্রেণী হতে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ায় তাদের মনােনয়নপত্র বৈধ বিবেচনার কোনো অবকাশ নাই মর্মে নির্বাচন বাের্ড সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে একই প্যানেলের একই শ্রেণী হতে নির্বাচিত মােঃ আব্দুর রহমান জামিল ও হুমায়ুন আহমদ প্রার্থী হওয়ায় সংঘবিধির ১২ (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের প্রার্থিতা বাতিল ঘােষণা করা হলো।’’
উল্লেখ্য, গত শনিবার অনুষ্ঠিত সিলেট চেম্বারের নির্বাচনে চার ক্যাটাগরির দুটির নির্বাচনে ৪০ প্রার্থীর মধ্যে পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন ১৮ জন। অপর দুই ক্যাটাগরিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪ জন পরিচালক বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ীরা হলেন- অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ (৭১৩ ভোট), ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান (৭০৮), মুশফিক জায়গীরদার (৬৫৩) এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের হুমায়ূন আহমদ (৯১১ ভোট), জহিরুল কবির চৌধুরী (৮৬৭), ফাহিম আহমদ চৌধুরী (৮৫৯), খন্দকার ইসরার আহমদ রকী (৭৯৬), আলীমুল এহছান চৌধুরী (৭৩২), মো. আব্দুস সামাদ (৬৮৮), দেবাংশু দাস মিঠু (৬৮৪), মো. নজরুল ইসলাম (৬৫৩), আব্দুর রহমান জামিল (৬৫০) বিজয়ী হয়েছেন।
এসোসিয়েট শ্রেণি থেকে বিজয়ী হয়েছেন, সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ (৬৫৭), মুজিবুর রহমান মন্টু (৬৫৭), ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব (৬১২) ও কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৬০৭) এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের জিয়াউল হক (৫৭০ ভোট) ও হাজী সরোয়ার হোসেন ছেদু (৫৪০)।
এদিকে, পরিচালক প্রার্থীদের মধ্যে ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে আবু তাহের মো. শোয়েব (চেম্বারের বিদায়ী সভাপতি), মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে আমিনুর রহমান। এ দুই ক্যাটাগরিতে চারটি পরিচালক পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
নির্বাচনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে সমান সংখ্যক তথা ১১ জন করে প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *