Home » সিলেটে ইন্সপেক্টর প্রদীপ কাণ্ড : জবানিতে কি তথ্য দিলেন তারা

সিলেটে ইন্সপেক্টর প্রদীপ কাণ্ড : জবানিতে কি তথ্য দিলেন তারা

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোর্ট পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) প্রদীপ কুমার দাশের কক্ষে ‘রাতে এক নারী কনস্টেবলে’র অবস্থান ও সেখান থেকে বের হয়ে আসাকে কেন্দ্র করে এখনো নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নারী কনস্টেবলের সাথে পুলিশ পরিদর্শকের ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ না অন্যকিছু তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

অভিযুক্ত দু’জনকে প্রত্যাহার করে নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। সে দিনের ঘটনা প্রথমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগতকারি গোলাপগঞ্জ কোর্টের জিআরও শওকত আলী, প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কনস্টেবল মিলন ও পীযুষসহ ইতোমধ্যে ৭ জন জবানবন্দি দিয়েছেন। আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যেরও সাক্ষি নেওয়া হচ্ছে।

সাক্ষিদাতারা তাদের জবানিতে সেদিনের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষি ও সিসিটিভি ফুটেজের তথ্য প্রমাণের কারণে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জিআরও শওকত ওইদিনের পুরো ঘটনা তিনি কিভাবে জানলেন, কি দেখলেন তার বর্ণনা দিয়ে তার জবানির এক জায়গায় উল্লেখ করেন, ‘তিনি ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে অফিসে বসে কাজ করছিলেন। ওই সময় জিআরও পলাশ ভেতরে ঢুকে হাসাহাসি করেন। বলেন, অনেক কিছু চোখে পড়ে কিন্তু বলা যাবে না। কনস্টেবল শাহরিয়ার বলেন, এখনো দুনিয়ার এতো খারাপ মানুষ আছে। তাদেরকে তিনি ধমক দিয়ে বলেন, নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। পরে শওকত জানতে পারেন কোর্ট পরিদর্শক প্রদীপ কুমারের কক্ষে একজন নারী কনস্টেবল রয়েছেন। ভেতরের বাতি নেভানো।

তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসএমপির সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র সরকার তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নারী কনস্টেবল ১ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৈমিত্তিক ছুটি (আদেশপত্র নং-১৩৫) নেন। একইদিন রাত ৮টায় তিনি কোর্টে ইন্সপেক্টরের কক্ষে পুনরায় কেন আসেন বোধগম্য নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের সময় ওই নারী কনস্টেবল ও তাকে এগিয়ে দিতে যাওয়া মালখানার কনস্টেবল পীযুষ রঞ্জন বিশ্বাসকে প্রধান ফটকে পেয়ে জিজ্ঞাসবাদ করেন। পীযুষ জানায় তাকে প্রদীপ কুমার বলেছেন নারী কনস্টেবলকে এগিয়ে দিতে। তার সাথে কথা বলার সময় নারী কনস্টেবল দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন’…।

এছাড়া আরও যে কয়েকজন কনস্টেবল সাক্ষি দিয়েছেন তারাও প্রায় একই বর্ণনা দেন। তবে ইন্সপেক্টর প্রদীপের কক্ষে কি ঘটেছিল তারা উল্লেখ করেননি কেউ।

সূত্রমতে, গত ১ ডিসেম্বর আদালতপাড়ায় মাসিক স্ট্যাটম্যান্টের শেষদিন ছিল। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টার দিকে নারী কনস্টেবল কোর্ট পরিদর্শক প্রদীপের কক্ষে প্রবেশ করেন। তার অবস্থানকালে কক্ষের বাইরে কিছু পুলিশ সদস্য যার যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। নারী কনস্টেবল কক্ষে প্রবেশের কিছু সময় পর ভেতরের বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয় ও দরজাও লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রত্যেক্ষ করেন বাইরে অবস্থানরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তারা কানাঘুষাও শুরু করেন।
প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর পরিদর্শক প্রদীপ দরজা খুলে বাতি নেভানোবস্থায় বের হন। বাইরে কয়েক মিনিট পায়চারি করে আবার ভেতরে যান। ওই সময় কনস্টেবল মিলন মামলার নথি আনার জন্য ভেতরে যেতে চাইলে তাকে প্রবেশ করতে দেননি প্রদীপ। দরজার কাছ থেকে নথি নিজেই এসে গ্রহন করেন-কনস্টেবল মিলনের জবানবন্দিতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাইরে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা কক্ষের ভেতর ‘অনৈতিক কিছু হয়েছে’ ধারণা থেকেই বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু করেন।

ওই সময় জিআরও শওকত এসএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র সরকারকে ফোনে বিষয়টি অবগত করেন। রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে প্রদীপ প্রথমে হাজতের পরিচ্ছন্নকর্মী নুর জাহানকে ডেকে নারী কনস্টেবলকে এগিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু নুর জাহান তা করেননি। উল্টো তিনি নারী পুলিশকে প্রশ্ন করেন- প্রতিদিন একা যান আজ আমি কেন এগিয়ে দেব। আর রাতেই বা কেন? পরে কনস্টেবল পীযুষকে ডেকে এনে নারী পুলিশকে এগিয়ে দিতে বলেন প্রদীপ। পীযুষ তাকে নিয়ে বের হয়ে কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে যাওয়ার পর এসি খোকন চন্দ্র তাদের দাঁড় করান।

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে নারী কনস্টেবল তাকে জানান- তিনি মোবাইল রেখে গিয়েছিলেন। পীযুষকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন ওই নারী পুলিশ। কয়েক জনের সাক্ষি ও সহকারি পুলিশ কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া নারী কনস্টেবলের ছুটি থাকার পরও প্রদীপ তাকে ডেকে নিয়ে আসা, বাতি নিভিয়ে কক্ষে অবস্থান ও নারী পুলিশের মোবাইল ফেলে যাওয়াসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি সিসি টিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার তথ্য প্রদানকারি জিআরও শওকত আলী এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি যা জানি তা লিখিত আকারে তদন্ত টিমের কাছে দিয়েছি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান এসএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা জানান, ইতোমধ্যে ৭ জনের সাক্ষি নেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকজনের নেওয়া হবে। তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে সে বিষয়েই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *