শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: হিন্দু ধর্মাবালম্বীদের শতবর্ষী শ্মশান দখলের অভিযোগে স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর হাইকোর্টে পার পেলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক। আদালতের কাছে দেয়া অঙ্গীকার অনুযায়ী শিবগঞ্জের বানাইল শ্মশানের কমিটি ও স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর তার ছবি আজকে আদালতে উপস্থাপন করার পর আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আওয়ামী নেতাকে ক্ষমা করে এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটাকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মনজিল মোরসেদ।
শতবর্ষী শ্মশানের জায়গা দখলের চেষ্টা নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে এ সংক্রান্ত রিট হয় হাইকোর্টে। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি হলো আজ।
নিষ্পত্তির আদেশে এমন খবর প্রকাশ করার জন্য দৈনিক কালের কণ্ঠ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানান আদালত। এছাড়াও আদেশে আদালত বলেন, শ্মশানের মতো স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। কিন্তু দখল চেষ্টাকারী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে আন্তরিক ছিল না।
গত ২৭ মে শ্মশানের কমিটি ও স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দ্বিতীয় বারের মতো সময় নিয়েছেলেন আজিজুল হক। তার আগে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ মে শ্মশানের জায়গা দখলের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে আজিজুল হাজির হলে আদালত তাকে ভৎসনা করেন। ওইদিন শুনানি শেষে আজিজুল হক শ্মশানের কমিটিসহ স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আদালতের কাছে অঙ্গীকার দিয়ে সময় চাইলে তা মঞ্জুর করেন।
গত ২৩ মে শ্মশানের কমিটি ও স্থানীয় জনগণের উপস্থিতিতে একটি ব্যানার ঝুলান আজিজুল হক। ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সেখানে স্পষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে গত ২৫ মে স্থানীয় কয়েকজনের উস্থিতিতে আগের ব্যানার অপসারণ করে পৃথক আরেকটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। সেটিতেও ক্ষমা চাওয়ার বিষয় স্পষ্ট ছিল না। সর্বশেষ ঝুলানো ব্যানারের ছবি গত ২৭ মে আদালতে উপস্থান করে দখলের ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চান আজিজুল হক।
রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলে, আদালতের কাছে আপত্তি জানান। আজিজুল হকের ক্ষমা চাওয়া বিষয়টি নিয়ে ওই দিন আদালত সন্তুষ্ট না হওয়ায়, শুনানি শেষে স্থানীয় জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে ক্ষমা চাইতে আজিজুলের পক্ষে ২য়বারের মতো সময় চাওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
এরপর গত মে ২৯ ব্যানার ঝুলিয়ে শ্মশান কমিটি ও স্থানীয়দের কাছে ক্ষমা চান আজিজুল হক। গতকাল সেই ক্ষমা চাওয়ার ছবি আদালতে উপস্থাপন করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
শ্মশান দখল করা নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুন দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘শতবর্ষী শ্মশান দখলে আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট করে। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয় গত ১৩ মে। ওই দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তলব করে আদেশ দেন আদালত।
নির্বাহী সম্পাদক