‘ওই দিন ফোন করে ঢাকায় পৌঁছার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে আছেন জানিয়ে বলেছিলেন বাসায় গিয়ে ফোন দেবেন। মাত্র ৫০ সেকেন্ডের সেই ফোন কলটি ছিল আমার সঙ্গে শেষ কথা। এখনো আশায় আছি, একটি ফোন পাব, তাঁকে ফিরে পাব। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো সান্ত্বনা নাই।’
কথাগুলো ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর গাড়িচালক আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগমের। ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে সিলেট নগরীর সুবিধবাজারে সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সংহতি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলেন তিনি।
আনসার আলী বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর দূরসম্পর্কের ভাতিজা। ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালাতেন তিনি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে গাড়িচালক আনসারও নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী মুক্তা বেগমের কাছে ফোনে কথা হয় তার। সেই থেকে আনসারের পরিবারের সদস্যরা ইলিয়াস আলীর সন্ধানের অপেক্ষায় আছেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে এম ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ ছিলেন তিনি।
সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম। তিনি জানান, তাঁর কাছে স্বামীর স্মৃতি বলতে তিন-চার বছরের সংসারজীবন। ২০০৮ সালে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মাহিয়া মেহজাবিন এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। মেয়েটির বয়স যখন তিন বছর, তখন আনসার আলী নিখোঁজ হন।
মুক্তা বলেন, ‘মেয়ের স্মৃতিতে কেবল পোস্টারে থাকা তার বাবার ছবিটাই। বাবা কই? জানতে চাইলে কোনো কিছু না বলে শুধু ছবিটি দেখায়। কথা বলে না, নীরবে কাঁদে।’
বড় একটি পোস্টারে আনসার আলীর ছবি নিয়ে সোমবার মানববন্ধনের এক কোণে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন মা ও মেয়ে। মানববন্ধন শেষে কথা বলতে চাইলে আনসার আলীর কিশোরী মেয়ে মহিয়া মেহজাবিন বোরকা দিয়ে চোখ আড়াল করতে চাইছিল, ‘বাবার কথা কিছু বলো…’ ওপাশ থেকে একজন বলছিলেন। বাবা কথাটি শুনেই যেন সে বাকরুদ্ধ। চোখ ছলছল করা মাহিয়া শুধু বলল, ‘বাবারে ফেরত চাই, আর কিছু না।’
সোমবার ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে সিলেটে ‘মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্ক’র উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।